মোহাম্মদ এনামুল হক : পবিত্র কাবাঘর ও মসজিদুল হারামের অতি নিকটে আকর্ষনীয়, চিত্তগ্র্রাহী ও দৃষ্টিনন্দন যে টাওয়ারটি আকাশের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে সে টাওয়ারটির নাম হলো আবরাজ আল-বাইত টাওয়ার্স, টাওয়ারটি মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার নামেও পরিচিত। মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারটি পৃথিবীর অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা। মক্কা টাওয়ারের সামনে গেলেই মানুষ বিমোহিত নয়নে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এ টাওয়ারটির দিকে। উচ্চতায় ৬০১ মিটার ও ৯৫ তলা বিশিষ্ট এ টাওয়ারটি বর্তমানে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থাপনা। ১ লাখ মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই টাওয়ারে আছে একটি বিশাল প্রেয়ার হল, এখানে একসাথে ১০ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন।
মক্কা রয়েল টাওয়ারের বেশ কয়েকটি সেভেন ষ্টার হোটেল, আছে বিশাল শপিং মল এবং এর নীচে একসাথে ১০ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। টাওয়ারের সবচেয়ে উপর তলায় দুটি হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য রয়েছে প্রশস্ত হেলিপ্যাড। এখানে আরো আছে চাঁদ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, মুসলিম ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাদুঘর। টাওয়ারের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে লাউড স্পীকার। এ লাউড স্পীকার থেকে ৭ কি.মি. পর্যন্ত আজান ও নামাজের তিলাওয়াত শোনা যায়।
সাতটি বড় বড় টাওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত মক্কা রয়েল টাওয়ারের শীর্ষে স্থাপন করা হয়েছে একটি রাজকীয় ঘড়ি। এ ঘড়িটি বিশ্বের সবচেয় বড় ঘড়ি। ঘড়িটির ডায়াল ৪৩ মিটার। যা লন্ডনের বিগবেন ঘড়ির ডায়ালের চেয়ে ৬ গুণ বেশি বড়। চতুর্মুখী মক্কা ঘড়ির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস মোজাইক গ্লাস। বড় অক্ষরে আল্লাহু আকবর লেখাটি ৩০ কি.মি. দূর থেকে পড়া যায় এবং ঘটির টাইম গণনা করা যায়।
আল্লাহু আকবার শব্দের উপরের দিকে ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ। স্বর্ণালি মোজাইক ও ফাইবার গ্লাসের তৈরি এই চাঁদটির ওজন ৩৫ টন। । বিশেষ বিশেষ দিনে এবং নামাজের সময় এই চাঁদ থেকে আলোকরশ্মি বিচ্ছুরণ বা ফ্ল্যাশ সংকেত দৃশ্যমান হতে থাকে। আলোর এই বিকিরণ আকাশের দিকে ১০ কি.মি. পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সে আলোয় উদ্ভাসিত ও প্রতিভাত হয়ে ওঠে পবিত্র মক্কা নগরী ও তার আকাশ। ঢেউ তোলে নয়নাভিরাম ও দৃষ্টিনন্দন এক আলোর ঝলকানি। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ক্লক টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে এবং উদ্বোধন করা ২০১১ সালে। পুরো টাওয়ার নির্মাণের মূল দায়িত্বে ছিলো সৌদি আরবের বিখ্যাত বিন লাদেন গ্রুপ। আর্কিটেচারাল, স্ট্রাকচারালসহ যাবতীয় ডিজাইন এবং সুপারভিশন এর কাজ করেছে প্রখ্যাত দার আল হানদাশাহ গ্রুপ ।
Discussion about this post