আব্দুল্লাহ আল শাহীন : সংযুক্ত আরব আমিরাতের বানিজ্য নগরী দুবাই। বহির্বিশ্বে মূলত বানিজ্য নগরী দুবাই নামেই ইউ এ ই’র পরিচিতি বিস্তার লাভ করেছে। সেইসূত্রে ইউ এ ই’র পরিবর্তে লোক মুখে দুবাই গমনের কথা শোনা যায়। ভৌগলিকভাবে দুবাই গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিনত হয়েছে। বিশেষকরে আকাশপথে যাত্রাবিরতি অথবা ট্রানজিট পদ্ধতি ! দুবাই ভালোই মুনাফা অর্জন করছে। প্রতিযোগিতার বিশ্বে ভোটের মাধ্যমে বানিজ্যের অন্যতম সোপান এক্সপো ২০২০ দুবাই ছিনিয়ে এনেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দীর্ঘ ছয় বছর থেকে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশীদের সাধারণ ভিসা। সাধারণ ভিসা বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে লোক আসা বন্ধ হয়নি। বিগত ছয় বছরে নানান উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বহুসংখ্যক লোক আমিরাতে প্রবেশ করেছে। ভারতের পাসপোর্ট করেও কেউ কেউ এসেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ভিজিট ভিসাতে লোক আসছেই।
পর্যটন শিল্প বহু দেশের অর্থনীতির মুখ্য উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বলা যায় পর্যটন শিল্প বিশ্বব্যাপী বিশেষকরে উন্নত দেশসমূহে একটি দ্রুত বিকাশমান খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সহজে পরিচিতি লাভ করা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে দিনদিন পর্যটনকেন্দ্র বৃদ্ধি করারা পাশাপাশি পর্যটকদের টানতে সকল রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমিরাতে বাংলাদেশের জন্য সাধারণ ভিসা বন্ধ থাকলেও হয়তো বানিজ্যের কথা বিবেচনায় ট্যুরিস্ট ভিসা সহজ রাখা হয়েছে। যদিও শুরুতে সব কিছুই বন্ধ ছিল। পত্র পত্রিকায় দেখেছি সরকারি কর্মকর্তার পর্যন্ত দুবাই আসতে নানান জটিলতায় পড়তে হয়েছিল। কিন্তু গেল দুই বছর থেকে পর্যায়ক্রমে ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা সহজ করা হয়েছে। যেকেউ চাইলেই দুবাই ভ্রমণ করতে পারছেন।
দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ, দুর্নীতি এবং বেকারত্বের কারণে যুব সমাজ প্রবাস মুখি। ইউরোপের ভিসা পাওয়া দিনদিন কঠিন হওয়ার ফলে যুবকরা এখন মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ও মালেশিয়া যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেক্ষত্রে দুবাই অনেকের পছন্দের জায়গা। কিন্তু দুবাই সাধারণ ভিসা বন্ধ হওয়ায় এখন ট্যুরিস্ট ভিসাতেই ভরসা। ট্যুরিস্ট ভিসায় কেউ এসে বৈধ হচ্ছেন আবার কেউ অবৈধভাবে বসবাস করছেন। যদিও সম্প্রতি অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বেলায় আরব আমিরাত কঠোর আইন চালু করেছে। আশ্রয় দাতা, কর্মস্থলে জরিমানা আরোপ করার আইন চালু হয়েছে।
এদিকে যারা ভিজিটে এসে ইনভেস্টর ভিসা লাগিয়ে দুবাইতে বসবাস শুরু করেছেন তারাও যে তেমন সুবিধাজনক অবস্থায় আছে তা নয়। যৌথভাবে উনভেস্টর ভিসার পেছনে একেকজনের প্রায় ৫ লাখা টাকার মতো খরচ হচ্ছে। কারো আবার বেশি হচ্ছে আবার কারো কিছু কম। কিন্তু আফসোস এর বিষয় হচ্ছে অনেকেই ইনভেস্টর ভিসায় থাকলেও কার্যকরী ইনভেস্টর হচ্ছেন না। একেবারে যে হচ্ছেন না তা কিন্তু নয়। তবে বেশি সংখ্যক নামে মাত্র ব্যবসায়ী লাইসেন্স করে, নামে মাত্র অফিস কক্ষ ভাড়া নিয়ে ভিসাটাই লাগাচ্ছেন। আবার বেশ কিছু সিন্ডিকেট আছে যারা কেবল নামে মাত্র ইনভেস্টর ভিসা লাগিয়ে দেওয়ার কাজ করে। এসব সিন্ডিকেট গ্রুপ দেশ থেকে কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে দেশ থেকে লোক এনে ইনভেস্টর ভিসায় বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে।
সিন্ডিকেট গ্রুপ দেশ থেকে লোক এনে ইনভেস্টর ভিসার মাধ্যমে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিলেও কাজের কোন সুযোগ করে দিচ্ছে না বা পারছেনা। যারা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছেন বা দুবাইতে পরিবারের কোন সদস্যের পূর্বের ব্যবসায় এসে যোগ দিয়েছেন তাদের কথা ভিন্ন।
বর্তমান সময়ে আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীক বাজার কেমন তা কেবল এখানে বসবাসকারীরা বলতে পারে। আর যারা ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের ধারণা আরো বেশি। প্রবাসী ইনভেস্টররা দোকান, রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইনভেস্টর ভিসা লাগিয়ে অনেক প্রবাসীরা সুবিধামতো কাজ না পেয়ে একপর্যায়ে পেপসির ক্যান কুড়াতে বাধ্য হোন। ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের অধীনে কাজ করা শুরু করেন। ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের অধীনে পেপসির ক্যান, কাগজ কুড়ানোটাও এখানে বৈধতার মধ্যে পড়েনা। কাগজ-কলমে একজন ব্যবসায়ী হয়ে ক্যান কুড়ানো কেমন দেখায়? পুলিশ গ্রেফতার করলে যখন আইডিতে ব্যবসায়ী লিখা দেখবে তখন কেমন লাগবে? তাহলে কী দাঁড়ালো? এতো টাকা খরচ করে বৈধ হওয়ার পরেও অবৈধ।
Discussion about this post