‘জাজ-রায়হান রাফি-সিয়াম-পূজা-ফজলুর রহমান বাবু’ এই টিমের প্রথম সিনেমা ছিল পোড়ামন-২। ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সফল এই সিনেমায় আমরা রায়হান রাফির দারুণ নির্দেশনা আর কমার্শিয়াল ঘরানার সিনেমার নবজাগরণ দেখার পাশাপাশি সিয়াম ও পূজার আগমনী গানও শুনেছিলাম।
মাত্র ৬ মাসের মাথাতেই তাদের নেক্সট প্রজেক্ট ‘দহন’ রিলিজ হবে শুনে স্বাভাবিকভাবেই দর্শক বেশ উৎসুক হয়ে উঠেছে। প্রথমে বিতর্কিত গান ও পরে দারুণ মেলোডির রোম্যান্টিক গান দিয়ে প্রমোশন শুরু করা দহনের ট্রেইলার উন্মোচিত হল সম্প্রতি। আর সে ট্রেইলার দিয়েই যেন মন মাতিয়ে দিল দহন। চলুন আলোচনা করে যাক ‘দহন’ এর ট্রেইলার নিয়ে! কেমন হল সে ট্রেইলার আর কী অপেক্ষা করছে দর্শকের জন্য আগামী সপ্তাহেই মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাতে!
ট্রেইলারের প্রথম দৃশ্যেই আমরা দেখতে পাই হাতকড়া পরা তুলাকে। পেছনে গগনবিদারী কণ্ঠে শোনা যায়- ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই শ্লোগান। হ্যাঁ সিয়ামের নাম এই সিনেমায় ‘তুলা’, তুলা নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে বলে যে তার নামের আগেও কিছু নেই আর পেছনেও কিছু নেই। কারণ, তুলা বস্তিতে নাম পরিচয়হীন ভাবেই বড় হয়ে উঠেছে। ঢাকা শহরের ঘিঞ্জি কোন এক বস্তির নোংরা পরিবেশে আমরা ফ্ল্যাশব্যাকে দেখি তুলাকে। তুলা বাংলাদেশের নিম্নবিত্তের প্রতিনিধি যাদের আমরা ভালো পরিবেশ, ভালো শিক্ষা এমনকি করুণা থেকেও বঞ্চিত করি প্রতিনিয়ত।
ওরা কাজ করতে চাইলে আমরা ওদের কাজে রাখতে চাই না। তাই ওদের হয় ভিক্ষা করতে হয় আর নাহলে অনৈতিক কাজ। আর সে অনৈতিক কাজে তাই ওদের কোন দ্বিধা কাজ করে না। আমাদের কাছে যেটা জীবিকা ওদের কাছে সেটি ওদের ধর্ম। কিন্তু সেই তুলাকেই আমরা বলতে শুনি যে- সে এমন কিছু করে ফেলেছে যেটা কোন ধর্মেই মানবে না।
কী সেই কাজ? ট্রেইলারে কেউ না বলে দিলেও আমরা জ্বলন্ত বাস আর ভাঙচুর দেখে টের পাই ঠিকই। কিন্তু কেন তুলা এই কাজ করলো আর কেনইবা সে নিজেকে এখন দোষারোপ করছে? নীতিবিবর্জিত কেউ কেন আত্মদহনে পুড়বে! তখনই আমরা দেখি তুলার অন্য সত্তাকে, যে সত্তা এক মেয়েকে ভালোবাসে। পূজা চেরির সাথে সিয়ামের রসায়ন দারুণভাবে উঠে আসে এবার পর্দায়। আমরা পোড়ামনের সুজন-পরীকে ভুলে যাই, সিয়ামের রাস্টিক ইমোশন আর পূজার দুষ্টুমি মুহূর্তেই আভাস দিয়ে দেয় মনকে সামনে হয়তো খারাপ কিছু আসছে। পূজার বাসা থেকে ওদের সম্পর্ক মানছে না তখনই সিয়ামের মুখে শোনা যায় লিডারের কাছ থেকে পাওয়া বড় কাজ করে অনেক টাকা কামানোর আশাবাদের কথা।
আবার প্রেক্ষাপট চেঞ্জ হয়, সিয়ামের মুখে শোনা লিডার নামটা আবার শুনতে পায় দর্শক, কিন্তু এবার ফোনের এপাশ থেকে সেটা বলছেন ফজলুর রহমান বাবু। কোন একটা বড় কাজের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বনিবনা হচ্ছে না তাদের।
সিয়ামের কাজ তার মানে বাবুর কাজ, আর বাবুর কাজ লিডারের কাজ। পেছন থেকে কোন রাজনৈতিক দলের লিডার তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফলের জন্য শহরে সহিংসতা করাতে চায় আর টাকার বিনিময়ে সে কাজ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন বাবু। কিন্তু কেউই তাদের হাত নোংরা করতে চান না তাই নৈতিকতা বিবর্জিত বস্তির ছেলেপেলেদের ভাড়া করা হয় তাদের হয়ে এই কাজ করার জন্য। আর সেভাবেই তুলা কাজটা পায়।
আমরা এরপর দেখতে পাই ৬ টা গল্প কীভাবে এক বিন্দুতে এসে মেলে। আমরা ট্রেইলারে দেখতে পাই এক অভাবী ছেলেকে, যে কীনা মায়ের চিকিৎসার জন্য খরচ যোগাতে ঢাকায় এসেছে নিজের কিডনি বিক্রি করবার জন্য। তারপর আমরা দেখতে পাই নিজের বাবাকে হজ্জে পাঠানোর জন্য অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমানো আরেকজনকে। অন্ধ মায়ের জ্যোতি হয়ে থাকা আরেক ছেলে তার মা’কে জানায় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। ওদিকে সিনেমার অফার পেয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করবার সাধ নিয়ে এক মেয়ের উচ্ছ্বাসও দেখতে পাই আমরা। প্রত্যেকে এসে এক বাসে মেলে, প্রত্যেকের গল্প যেন বাসে এসে বিরতি নেয়। এরই মাঝে তুলার গল্প শুরু হয়, দেখা যায় পেট্রোল বোমা ঢুকে যাচ্ছে বাসের জানালা দিয়ে। হঠাৎ বিস্ফোরণে কানে তালা লেগে যাবার উপক্রম। আমরা বুঝতে পারি পাঁচটি জীবনের গল্প এখানেই বাঁক নিলো। চারজন পুড়লো রাজনৈতিক কোন্দলের দহনে আর আরেকজন সামনে পুড়বে আত্মদহনে।
তখনও ষষ্ঠজনের গল্পে আসিনি আমরা। তুলার আত্মদহন আরও কোটি গুণ বাড়িয়ে দিয়ে আমরা জানতে পারি ঐ বাসে তুলার ভালোবাসা অর্থাৎ পূজা চেরিও ছিল। পূজার দগ্ধ মুখ হাসপাতালে দেখে সিয়াম নিজেকে সোপর্দ করে পুলিশের কাছে। পুলিশও তৎপরতা দেখিয়ে সিয়ামকে কোর্টে চালান করে দেয়, ওদিকে এক অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক বুঝতে পারে কেবল তুলা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলে হবে না। তুলার গল্পে কলকাঠি নাড়িয়েছে অন্য কেউ। তিনি ঐ গল্পটাই খুঁজতে চান তুলার কাছে এসে। আত্মদহনে ছাই হয়ে যাওয়া তুলাকে শেষ করে দিতে ওদিকে রাজনৈতিক শক্তিও তৎপর কারণ তাদের নাম চলে আসলে উল্টো বিপদ হয়ে যাবে। তাই দিনশেষে সকল বোঝার ভার তুলাকে একারই বইতে হবে নাকি সাংবাদিক মম খুঁজে বের করতে পারবে মূল হোতাদের যাদের রক্তাক্ত রাজনীতির কারণে বলি হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
তুলার ভালোবাসার মানুষটা কি বাঁচবে? বাঁচবে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা সে সাধারণ মানুষগুলো? নাকি প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির শিকার হয়ে যাব আমরা নিয়মিতই। ট্রেইলারশেষে তুলার বলা কথা তাই আমাদের মনের কথাও যেন- “আমি আমাগোর নেতাগো পায়ে ধইরা একটা কথা কই, আপনারা ক্ষমতায় যাওনের লাইগ্যা আর কাউরে মাইরেন নাহ!”
সেলিব্রেটিবিডি/এইচআর
Discussion about this post