যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ খুলেছেন মিজ আয়ারল্যান্ডখ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মডেল ও অভিনেত্রী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। যা নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, বিনোদন অঙ্গণ ও সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ আলোড়ন শুরু হয়েছে।
৩০ অক্টোবর রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন প্রিয়তি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ৩১ অক্টোবর একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন প্রিয়তি।
ওই ভিডিও বার্তায় প্রিয়তি বলেন, ‘মি: রফিকের অফিস অনেক বেশি সিকিউর। আপনারা তার অফিসে গেলেই তা দেখতে পারবেন। তার অফিস রুমের ভেতরের কোনো কথা রুম থেকে বাইরে শোনা যায় না। আবার বাইরের কোনো কথা রুমের ভেতরে শোনা যায় না। তার রুমে প্রবেশ করতে হলে সে একটা নির্দিষ্ট সুইচ প্রেস না করা পর্যন্ত রুমের দরজা খোলে না। অনেক সিকিউরিটি আছে সেখানে। তার নিজের প্রাইভেট সিকিউরিটিও আছে। ওই দিন ওই সময়ে কী হয়েছে তার বর্ণনা দেওয়ার মতো কোনো মেয়ের কী আর কোনো ভাষা থাকতে পারে? তিনি আমাকে নোংরাভাবে রেপ করতে চেয়েছিলেন। তখন আমি খালি ভাবছিলাম কীভাবে সেফলি বের হব এখান থেকে। ভয়াবহ মুহূর্ত শেষে শেষ পর্যন্ত বের হতে পেরেছিলাম। বের হয়ে লোপা আপুকে বিষয়টা বলেছি। কিন্তু আপুর কিছু করার নাই। কারণ আপুর সেই পাওয়ার নাই।
প্রিয়তি আরও বলেন, ‘আমিতো এখানে কাপড় খুলে ঘুরি। কই কেউতো আমার শরীরে হাত দেয় না। আমিতো ফটোগ্রাফারের সামনে কাপড় খুলে ছবি তুলি। কই কোনো ফটোগ্রাফারতো আমার দিকে নোংরা দৃষ্টিতে তাকায় না বা গায়েও হাত দেয় না। ছোট পোশাক পরে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর এক ডিনার অনুষ্ঠানে গিয়েছি। কই কোনো মন্ত্রীতো আমরা জামার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়নি। সেদিন মি: রফিকের অফিসে আমি সালোয়ার কামিজ পরে গিয়েছিলাম।’
বিবৃতিতে প্রিয়তি আরও বলেন,‘#মিটু মুভমেন্টের আগেও আমি যৌন হ্যারাজমেন্ট নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু রফিক সাহেবের নাম নিয়ে কথা বলার সেই সাহস এতদিন আমার ছিল না। এতোদিন পর সাহস যুগিয়েছি। তিন বছর আগে আমি নিশ্চয়ই আজকের মতো ছিলাম না। তখন বাংলাদেশে আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না। সেদিন ওখান থেকে চলে আসার পরদিন রফিক সাহেব আমাকে ফোনের উপর ফোন দিতে থাকেন। আমি ফোন ধরার পর তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনি তো টাকা নিতে আর আসলেন না। আপনি যদি কোনো ব্যাপারে মুখ খুলেন তাহলে আপনাকে ফেলে দেওয়া মাত্র ২ সেকেন্ডের ব্যাপার।’ এরপর তিনি জানান, অ্যাইয়ারল্যান্ড খুব বেশি দূর না। এটা নাকি তার হাতের নাগালে। রংধনু গ্রুপের ওয়েবসাটটা এরই মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে যদি যান তাহলে তার ইতিহাস আপনারা পাবেন। সে সন্ত্রাসী করে এতো দিনে এতো কিছু করেছে। সে দালালি করে এতো দূর এসেছে।’
এর আগে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ৩০ অক্টোবর প্রিয়তি তার ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেন, ‘এই লোকটি তার অফিসে হঠাৎ করে টেবিল থেকে উঠে এসে আমার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে আমার বক্ষে চাপ দেয়, ২০১৫ সালের মে মাসে তাদের প্রোডাক্ট প্রমেক্স-এর বিজ্ঞাপনের পেমেন্ট আনতে গিয়ে ( এই পেমেন্ট যদিও আমি পাইনি)। সাঈদা যেমিরান জামান লোপা আপু, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, আপনাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল আমার সাথে প্রাইভেট কথা আছে এই কথা বলে। আর রুম থেকে বের হয়ে আমি আপনার কাছে কান্না করেছিলাম এই পিশাচের এই কর্মকাণ্ডে, মনে আছে আপু , নাকি অস্বীকার করবেন? খালেদ হোসাইন সুজন, তোমার কি মনে আছে এ ঘটনার পর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করেছিলাম এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কিন্তু আমরা নিরুপায় ছিলাম তাদের ক্ষমতার কাছে। আমি কিন্তু তখন কারেন্ট মিস আয়ারল্যান্ড ছিলাম।’প্রিয়তি তার ওই পোস্টে আরও লিখেন, ‘বাংলাদেশে #মি_টু এর মুভমেন্ট কীভাবে হবে? এই লোককে নিয়ে কেউ কোনো নিউজ করবে না, কারণ গণমাধ্যম তাদের ভয় পায়, সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে। কারণ বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা তাদের হাতের মুঠোয়। কীভাবে খুলবে মেয়েরা মুখ? যেখানে জানবে তাদের কিছুই হবে না। এই লোকটির নাম রফিকুল ইসলাম , রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ডান হাত। এই পোস্টের পর হয়তো আমার নামে মানহানির মামলা হবে , না হয় বলবে অসৎ উদ্দেশ্য আছে আমার ইত্যাদি ইত্যাদি। বাংলাদেশের মেয়েরা ততদিন মুখ খুলবে না, #মি_টু ও হবে না, ভারতের মতো যতদিন ওরা অনুভব করবে তাদের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীন এবং তাদের পাশে থাকবে সে যত উপরের মানুষই হোক না কেন। আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, পুরো ঘটনাটি লজ্জায় লিখতে পারিনি কারণ ঘটনা এর চেয়ে ভয়াবহ ছিল।
এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনার দিন উপস্থিত ছিলেন মডেল খালেদ হোসাইন সুজন, তার সঙ্গেও এ বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সেলিব্রেটিবিডি/ এনজেটি
Discussion about this post