রহমান মতি:
জীবনের শেষদিকে এসে একজন শিক্ষকের মনে হলো তার প্রিয় ১১ ছাত্রকে চিঠি লিখে পুরনো স্কুলঘরে ডাকবেন। চিঠি লিখে ডাকা হলো ছাত্ররা সবাই এলো। শিক্ষক তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলঘরে যাবার জন্য উতলা। তাঁর মেয়ে অবাক বাবা তাঁর ছাত্রদের এতটা ভালোবাসেন দেখে। বাড়িতে রান্নাবান্না হয়েছে স্কুলঘরে কথা সেরে তাদের সবাইকে নিয়ে একসাথে খাবেন তিনি।
স্কুলঘরে ১১ ছাত্র তো তাদের প্রিয় শিক্ষককে দেখে খুব খুশি। তারা আদৌ কি জানত প্রিয় শিক্ষক তাদের কিজন্য ডেকেছেন! ধীরে ধীরে গল্পে প্রবেশ করতে থাকেন তিনি।
১১ ছাত্র বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পদের, পেশার তবে তাদের পরিচয় একটাই তারা তাদের প্রিয় শিক্ষকের ছাত্র। তারা যে যার পদে আছে সবারই পেশাগত ফাঁকফোকর ছিল। নৈতিকতার সমস্যা তাদের প্রত্যেকের মধ্যে বিদ্যমান। শিক্ষক তাদের সবার সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। তাই তিনি ছাত্রদের তাদের ছোটবেলার মতো করে শিক্ষা দিতেই ডেকেছেন। অসাধারণ চিন্তাভাবনা।
একবার ঈদে প্রচারিত নাটক ‘এবার তোরা মানুষ হ’তে এমনই গল্প চিত্রায়িত করেছেন মাবরুর রশীদ বান্নাহ। আফরান নিশো, সিয়াম নাসির, সাগর হুদা, মাশরুর ফারহান অভিনয়ের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
ছাত্রের উন্মোচনটা দেখা যাক – এক. ডাক্তার – তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেয়া হয়। দুই. ছাত্রনেতা – অসৎ উপায়ে নেতাগিরি করে। শিক্ষক বলেন-‘কি রে তুই কি দশজনেরটা একলাই খাস!’ ছাত্রটিকে রামদা হাতে দেখে কষ্ট হয় তাঁর। তিন. সাংবাদিক – সাংঘাতিক বলে পরিচয় দেন শিক্ষক প্রথমে। নিউজ চ্যানেলে কিভাবে খবর পরিবেশন করা উচিত বলে দেন। চার. নায়ক – যৌথ প্রযোজনা আর লোকাল মিলিয়ে ১৫ টা ছবি তার হাতে। শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গিয়েও তার কালচারের পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করে ‘অ্যাকচুয়ালি ব্রো’ বলে। তাকে ছবির পোস্টারে খালি গায়ে দেখে খারাপ লেগেছিল শিক্ষকের। তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে দেন তিনি। পাঁচ. বিজনেসম্যান – তার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বিজনেস আছে। ১০হাজার টাকা বেতন প্লে গ্রুপের ছাত্রের। তাকে গরিব ছাত্রদের পড়ার সুযোগ করে দিতে বলেন। ছয়. বিসিএস ক্যাডার – পুলিশ। দুর্নীতিগ্রস্ত। তার উপর খুব মন খারাপ প্রিয় শিক্ষকের। সাত. মানবপাচার – এক্সপোর্ট ইমপোর্টের নামে অসৎ আয় করে। হজ্বে ভিসা জটিলতা যাদের হয় তাদের কাছে সুযোগ নেয়। আট. আমলা – ফাইল আটকে রাখে। দুর্নীতিগ্রস্ত। নয়. পেশাদার সন্ত্রাসী – টাকার বিনিময়ে যে কোনো খারাপ কাজ করে। প্রিয় শিক্ষক বলে-‘কেউ একজন তোকে আমাকে মারার জন্য টাকা দিলে কি তুই মারবি রে?’ দশ. রাজনীতিবিদ – ক্ষমতার অপব্যবহার করে। যার ডাকে অনেক মানুষ জড়ো হয় তাদের জন্য ভালো কিছু করার পরামর্শ দেন। এগার. প্রতিষ্ঠিত নয় ছাত্রদের সবাইকে তাদের প্রিয় শিক্ষক ছোটবেলায় মানুষ হবার যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তারা একটা সময় সেটা ভুলে যে যার কর্মজীবনে অসৎ দিকে পা বাড়ায় আর তাদের শিক্ষক তাদেরকে ডেকে তাদের কাছে হারানো সততা ফেরত চান। একজন আদর্শবান শিক্ষকের আর কি চাইবার থাকতে পারে তাঁর ছাত্রদের কাছে! তাদের অপরাধ বা কৃতকর্মের জন্য ছোটবেলার ছোট ছোট শাস্তিগুলো বড়বেলাতে এসেও দেন। এটা ছিল পরিপূর্ণ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য।
শেষে এসে একটা সংখ্যা প্রিয় শিক্ষক তার ছাত্রদের কাছে মিনতি করে চান দাবি হিশেবে। নাটকের ইনোভেটিভ আইডিয়ার মধ্যে এটা ছিল সেরা। চমকটাও ঐ সংখ্যাই। নাট্যকারের অনবদ্য চিন্তাকে সম্মান করতেই হয় এখানে এসে।
শিক্ষকের ভূমিকায় আফরান নিশো-র অভিনয় পেশাদার। তার অভিনয়ে চরিত্র নির্বাচনের বৈচিত্র্যে এ নাটকটি অন্যতম হয়ে থাকল। ছাত্রদের ভূমিকায় সবাই চমৎকার এবং নিশো-র মেয়ের ভূমিকার অভিনেত্রীও ন্যাচারাল।
কিছু নাটক নাট্যকারের আইডিয়ার কারণে বিশেষত্ব পায়। এ নাটকটি তাই। নাটকে দেখানো এমন শিক্ষকের আশীর্বাদ যে কেউ নিতে চাইবে।
সেলিব্রেটিবিডি/ এনজেটি/আরএম
Discussion about this post