দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন রোগের এক মাসে ছোটবড় অর্ধশতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। কোরবানির আগে এই রোগের বিস্তার বাড়তে থাকায় খামারি ও গরুর মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রমও।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) এক ধরনের চর্মরোগ। এ রোগ হলে গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এটি ভাইরাস জনিত ছোঁয়াচে রোগ। গরু-বাছুর প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা পড়ে এবং পা ফুলে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। এই ক্ষত শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। গরু ঝিম মেরে কাঁপতে শুরু করে। এতে গরুর কিডনির ওপর প্রভাব পড়ার ফলে আক্রান্ত গরু মারাও যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত গবাদিপশুর খামার রয়েছে ৪০টি এবং অনিবন্ধিত রয়েছে ৫৩৭টি। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি, মহিষ ৭০টি, ছাগল ৮৫ হাজার ৬৯০টি এবং ভেড়া ৫ হাজার ৫৩টি।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশি আক্রান্ত হয়েছে পৌরসভা ও এলুয়ারি ইউনিয়নে। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক বিভিন্ন বয়সী গরুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের চিন্তামন গ্রামের লিটন হোসেন, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আম্রবাড়ী গ্রামের টরু চন্দ্র, রওশন ও রতন, পৌরসভার চকচকা গ্রামের মেহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, সোহেল, আমানত, সাজু, নজরুল, জনি, পূর্ব রামচন্দ্রপুর গ্রামের বেলাল হোসেন, বারোকোনা গ্রামের কাশেম, তেঁতুলডাঙ্গার সুজন মিয়া, চকসাহাবাজপুরের মন্টু ও আশরাফুল ইসলামের একটি করে গরুর বাছুর এবং দৌলতপুর, আলাদিপুর, এলুয়ারি ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অর্ধশত গরু এ রোগে আক্রান্ত মারা গেছে।
এলুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রশীদ বলেন, আমার ১১টি গরুর মধ্যে তিনটি বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। গরুগুলো নিয়ে সবাই খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।এলুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নবিউল ইসলাম বলেন, এক মাসে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ছোটবড় অর্ধশত গরুর মৃত্যুর কথা শুনেছি। এ জন্য অনেকেই ভয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের লাইভ স্টোক সার্ভিস প্রোভাইডার (এলএসপি) মোছা. সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত গরু খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগের ব্যাপারে খামারিদের সচেতন করে দিকনির্দেশনাসহ আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখতে বলা হচ্ছে।উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে সরকারিভাবে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ প্রতিরোধক কোনো টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এ জন্য গরুর মালিকদেরকে দোকান থেকে টিকা কিনতে হয়। টিকার দাম বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষে এই টিকা কিনে গরুকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে টিকা বরাদ্দ আসলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আক্রান্ত গরু দুর্বল হয়ে পড়া অবস্থায় এ টিকা দিলে গরুর মৃত্যু হতে পারে। এ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্যারাসিটামল ও সোডিয়াম বাই কার্বনেট ট্যাবলেটের সংকট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যারা নিজেদের গরুকে প্রতিরোধক টিকা দিয়েছেন, তাদের গরু সুস্থ আছে। আর যারা টিকা দিতে পারেননি তাদেরই গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটি করা হবে।
Discussion about this post