দালালের মাধ্যমে এক বছর আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন রাজবাড়ীর জালদিয়া গ্রামের দুই চাচাতো ভাই। তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দাবি পরিবারের। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।ভুক্তভোগী দুজন হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবাল মোল্লা। তাঁরা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
কামাল মোল্লা বলেন, গ্রামের প্রতিবেশী মনিরুদ্দিন মোল্লা ও তাঁর শ্যালক মামুন মোল্লা ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথম দফায় গত বছরের ৫ মার্চ নগদ ৬ লাখ এবং ২৬ মে ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ৪ লাখ টাকাসহ মোট ১০ লাখ টাকা নিয়ে সোহেল ও ইকবালকে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে কাজ না পেয়ে উল্টো তাঁরা দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হন। কাজ দেওয়ার আশ্বাসে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি মনিরুদ্দিন ও মামুন তাঁদের কাছ থেকে আরও ২ লাখ টাকা নেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে সোহেল ও ইকবালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তিন মাস ধরে সোহেল ও ইকবালের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবার দুটির। উপায় না পেয়ে ২৭ এপ্রিল রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মনিরুদ্দিন ও মামুনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন সোহেল মোল্লার স্ত্রী রিনা আক্তার।
রিনা আক্তার বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার স্বামী ও দেবরের কোনো খোঁজ নেই। মনিরুদ্দিন ও মামুন আবার নতুন করে আমাদের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। এ টাকা দিলে আমার স্বামী ও দেবরকে এনে দেবেন। আমরা তাঁদের মোট ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। নতুন করে ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব।’
ইকবাল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ও ভাশুর বেঁচে আছে নাকি মারা গেছেন জানি না। তিন মাস ধরে তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ছোট দুই মেয়ে এবং ভাশুরের ছোট এক মেয়ে। বাচ্চারা সব সময় কান্নাকাটি করে, তাঁদের বাবাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমরা অনেক খুব কষ্টে দিন পার করছি। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামী ও ভাশুরকে দেশে ফেরত এনে দিক।’
অভিযুক্ত মামুন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল ও ইকবালকে যে কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা সেখানে কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চান। এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে তাঁদের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁদের বিষয়ে নিজের আর কোনো দায়ভার নেই বলে দাবি মামুন মোল্লার। সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ছেলে দুটিকে ফেরত চাই। আর দালালদের কঠিন শাস্তি চাই, যাতে দালালদের খপ্পরে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোনো পরিবার সর্বস্বান্ত না হয়।’
Discussion about this post