আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বনী আদমের মাঝে তাঁর ইবাদত-আনুগত্যের, সর্বোপরি হেদায়েত ও জান্নাতের পথে চলার সহজাত যোগ্যতা ও শক্তি দিয়েই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন; কারণ সে তাঁরই খলীফা, তাঁরই প্রিয় সৃষ্টি। প্রসিদ্ধ হাদিসটি প্রায় সবারই জানা, নবীজী বলেন, প্রতিটি সন্তানই ‘ফিতরাত’-এর উপর (হেদায়েত ও সত্যপথ গ্রহণের সহজাত যোগ্যতা নিয়েই) জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বানায়, খ্রিস্টান বানায় বা অগ্নিপূজারী বানায়। (সহীহ বুখারী, ১৩৮৫)
শুধু তাই নয়, সহজাতভাবে হেদায়েতের উপর থাকতে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা সেগুলো কোনো শিশুকেই (স্বভাবগতভাবে) দেননি, বাকি শিশু যদি পরবর্তীতে পরিবেশ থেকে শিখে নেয় তা ভিন্ন কথা। তো আমার সন্তান, কলিজার টুকরা, যাকে একমাত্র আমার মনে করছি, সে তো আমার হাতে আল্লাহর আমানতÑ আল্লাহর খলীফা, যাকে আল্লাহ ইবাদত-আখেরাত-জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর সে জন্যই আল্লাহ তার মাঝে সে যোগ্যতা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যা দিয়ে সে আল্লাহর নিকট থেকে এসে পুনরায় আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে পারে।
এ হলো সন্তান নিয়ে ভাবনার আরেক দিক। আর জানা কথা এবং বাস্তবতাও এই যে, এ দিকটিই হলো ভাবনার আসল দিক। সন্তানের আসল রূপ। কেননা আল্লাহ তাআলা এ মানুষের জন্যই দুনিয়ার সবকিছু সৃজন করেছেন, জান্নাত সাজিয়েছেন, জাহান্নাম বানিয়েছেন। এক সময় সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র মানুষই বাকি থাকবে। দুনিয়া তো নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী, আসল না। আসল তো আখেরাত। কিন্তু হয় কী! যে দিকটি মূল সে দিকে আমরা খুব কমই ভ্রুক্ষেপ করি। ভাবি না যে, সে আল্লাহরও, সে তো আল্লাহর খলীফা।
আমরা সাধারণত ভাবিÑ এ আমার সন্তান, সুতরাং তাকে আমি একান্ত আমার ইচ্ছা অনুসারে গড়ব। কে আছে বাধা দেয়ার, কার কী বলার আছে! তার উপর একমাত্র অধিকার আমার। কিন্তু যদি একটু ভেবে দেখি কে তাকে সৃষ্টি করেছেন। যাকে একমাত্র আমার মনে করছি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মেধা ও শক্তি-সামর্থ্যসহ তার পুরো অস্তিত্ব কে দান করেছেন? পৃথিবীতে আগমনের পর তার জীবনের জন্য আলো-বাতাস-ভূমিসহ যাবতীয় আবশ্যকীয় উপকরণ কে দান করেছেন? আমি না আল্লাহ? আমি শুধু তাকে বহন করেছি, লালন-পালন করেছি।
তাহলে এখন সন্তানকে কার ইচ্ছা অনুযায়ী লালন-পালন করা হবে? আমার ইচ্ছায়, না আল্লাহর ইচ্ছায়? আমি সন্তানকে আল্লাহর হুকুমের বিপরীতে লালন-পালন করছি; বিজাতীয় কালচারে তাকে গড়ে তুলছি। কাল আমার আদরের সন্তানই যদি আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে নালিশ করে আমাকে সম্বোধন করে বলেÑ আমি অবুঝ ছিলাম তোমরা কেন আমার পথ জান্নাত থেকে ঘুরিয়ে দিলে, দ্বীন কবুলের আমার সহজাত শক্তিকে কেন বিনষ্ট করে দিলে? আমাকে যদি ছোটবেলা থেকেই আমার সহজাত পথে রাখতে এবং আমাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করতে, তাহলে আজ আমার এ অবস্থা হতো না। তা না করে কেন তোমরা আমাকে বিপথগামী করলে? তখন আমরা কী জবাব দেব?
মূল কথা হলো, আমাদের ভাবা দরকার, আমাদের সন্তান কি একান্তই আমাদের নাকি আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত? তারা কি শুধু আমারই সন্তান, না আল্লাহর খলীফা? তাই তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপদ্ধতি কী এবং কী হওয়া দরকার; গুরুত্বের সাথে ভাবা উচিত। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। (আমীন)
Discussion about this post