সমস্ত প্রশংসা ভূমণ্ডল নভোমন্ডলের পালনকর্তা মহান আল্লাহর জন্য। যিনি সকল বাবাদের অন্তরে সন্তান সন্ততিদের প্রতি রহমত ঢেলে দিয়েছেন।
পরিপূর্ণ রহমত ও দরুদ অবতীর্ণ হোক মহানবী ﷺ–এর প্রতি।
হে মানবমন্ডলী!
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো।
“যিনি তোমাদেরকে একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁদের উভয়ের মাধ্যমেই ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য নারী ও পুরুষ।”
সূরা আন নিসা : ১
আজ আমরা মহানবী ﷺ–এর সম্মানিত কন্যাদের নিয়ে আলোচনা করবো। আলোচনা করবো কন্যাদের সাথে রসুল ﷺ–এর সদাচরণ এবং আন্তরিকতা নিয়ে।
আল্লাহ তাঁর প্রিয় রসুল ﷺ–কে মা খাদিজা রাঃ’র ঘরে চারজন কন্যা সন্তান দান করেন। রসুল ﷺ তাঁদের নামকরণ করেন অত্যন্ত সুন্দর নামে—
১. যয়নব রাঃ – অর্থ: পবিত্র বৃক্ষ।
২. রোকেয়া রাঃ – অর্থ: উচ্চ মর্যাদা।
৩. উম্মে কুলসুম রাঃ – অর্থ: অত্যন্ত সুন্দর চেহারা; আরেকটি অর্থ পূর্ব দিগন্তের তারা।
৪. ফাতেমা রাঃ – অর্থ: ত্রুটি মুক্ত, গুনাহ ও পাপ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পবিত্রমুখী।
প্রিয় মুসল্লীগণ!
কন্যাদের প্রতি রহম করবেন, উত্তম আচরণ করবেন।
যখনই সাইয়্যিদাহ ফাতেমা রাঃ বেড়াতে আসতেন, রসুল ﷺ তাঁকে বলতেন:
“স্বাগতম হে আমার কলিজার টুকরা।”
মা আয়েশা রাঃ বলেন:
“ফাতেমা হুবহু রসুল ﷺ–এর মতোই কথা বলতেন। আর কাউকেই রসুল ﷺ–এর মতো কথা বলতে দেখিনি। যখনই ফাতেমা আসতেন, রসুল ﷺ তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন, তাঁকে স্বাগতম দিতেন, তাঁর কপালে চুম্বন করতেন, তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। অনুরূপভাবে রসুল ﷺ যখন ফাতেমাকে দেখতে যেতেন, ফাতেমা দাঁড়িয়ে বাবাকে সম্মান করতেন, বাবার হাত ধরে রাখতেন, বাবাকে মোবারকবাদ দিতেন, বাবার কপালে চুমু দিতেন, নিজের জায়গায় বাবাকে বসাতেন। ফাতেমা রাঃ–এর কথা ও কাজ সবকিছুই অবিকল মুহাম্মদ ﷺ–এর সদৃশ ছিল।”
সুনানে তিরমিজি : ৩৮৭২
রসুল ﷺ বলতেন:
“ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। তাঁকে অসন্তুষ্ট করা মানে আমাকে অসন্তুষ্ট করা।”
সহীহ বুখারি : ৩৭১৪, সহীহ মুসলিম : ২৪৪৯
নবী করিম ﷺ বলেছেন:
“যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাছে কন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে এবং ঐ কন্যার দ্বীন ও চরিত্র যদি সন্তোষজনক হয়, তবে তাদেরকে বিয়ে করো। নচেৎ পৃথিবীতে ফিৎনা ও বড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।”
সুনানে তিরমিজি : ১০৮৪
একদা রসুল ﷺ ফাতেমাকে দেখতে যান। সেখানে আলী রাঃকে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কোথায়? ফাতেমা রাঃ জানালেন, আমাদের মধ্যে একটু মনোমালিন্য হওয়ার কারণে তিনি বের হয়ে গেছেন। অতঃপর রসুল ﷺ আলী রাঃকে খুঁজে বের করে এনে উভয়কে মিলিয়ে দেন।
সহীহ বুখারি : ৬২৮০, সহীহ মুসলিম : ২৪০৯
“আল্লাহ যাকে ইচ্ছে ছেলে আর যাকে ইচ্ছে কন্যা দান করে থাকেন।”
সূরা আশ শুরা : ৪৯
মহানবী ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি তার দুটো বা তিনটি কন্যার লালন পালন করবে বিয়ে দেয়া পর্যন্ত বা আমৃত্যু পর্যন্ত, জান্নাতে সে আমার সাথে এভাবেই থাকবে।” – (দুই আঙুলের মতো কাছাকাছি)
সহীহুত তারগীব : ১৯৭০
রসুল ﷺ রাজা নাজ্জাশী রাঃ’র কাছ থেকে রেশমী কাপড় ও স্বর্ণ হাদিয়া পাওয়ার পর তা আবুল আসের কন্যা উমামাকে দান করে দেন।
সুনানে আবু দাউদ : ৪২৩৫
আল্লাহ বলেন:
“পুরুষের উপরও নারীদের হক্ব রয়েছে।”
সূরা আল বাক্বারা : ২২৮
প্রিয় ভাইয়েরা!
ইসলামে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। তাঁদের অধিকার আমাদের উপর রয়েছে। প্রিয় রসুল ﷺ–এর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের পরিবারে তা প্রয়োগ করুন।
দোয়া:
হে আল্লাহ! আমাদের মা–বোন–স্ত্রী ও কন্যাদের কবুল করুন। তাঁদের হক্ব আদায় করার তাওফিক দিন।
হে আল্লাহ! আমাদের মা–বাবাকে মাফ করুন, তাঁদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। আমিন।
খতীব:
মুফতি এম কিউ এম সাইফুল্লাহ মেহরুজ্জামান
আবদুল্লাহ আস সানি সরকারি জামে মসজিদ
সাইফ জোন, শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত
Discussion about this post