মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) পাঠাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার নিজের মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন শাহ।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সেখানেই এই অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতি কোম্পানির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০। সেই মোতাবেক ওই রাজ্যে আরো পাঁচ হাজার জওয়ান পাঠাচ্ছে শাহের মন্ত্রণালয়। এমনিতেই ওখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ এবং সেনার সাথে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ছয়জনের লাশ উদ্ধারের পর থেকে মেইতেইদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত মণিপুর। রোববার মহারাষ্ট্রে প্রচারের কর্মসূচি বাতিল করে দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন শাহ।
সূত্রের খবর, দিল্লি পৌঁছে বৈঠক করেছিলেন তিনি। এরপর সোমবার আবার নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে মণিপুরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পরেই সেখানে আরো ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে একটি দল পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
এর আগে সোমবার সকালে মণিপুরের তিনটি মামলার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোন তিনটি মামলা এনআইএ-কে দেয়া হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। শুধু জানা গেছে যে হিংসা, প্রাণহানিসংক্রান্ত এই তিন মামলার তদন্ত করছিল মণিপুর পুলিশ। তাদের থেকে নিয়ে তদন্তভার তুলে দেয়া হলো এনআইএ-র হাতে। মনে করা হচ্ছে, তদন্তে গতি আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের সঙ্ঘাতের কারণে উত্তপ্ত মণিপুর। সেই হিংসার প্রথম পর্বে জিরিবাম জেলায় সঙ্ঘাতের আঁচ পড়েনি। সম্প্রতি সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী এবং কুকি জঙ্গিদের গুলি বিনিময় হয়। ওই সময় একই মেইতেই পরিবারের তিন নারী এবং তিন শিশুকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে কুকিদের বিরুদ্ধে। বাহিনীর গুলিতে ১০ জন কুকির প্রাণ গেছে। কুকি সম্প্রদায়ের দাবি, নিহতেরা ‘গ্রামের পাহারাদার’। ওই ঘটনার পর থেকে অপহৃতদের খোঁজ মেলেনি। জিরি নদীতে ছয়জনের লাশ মিলেছে। মেইতেইদের দাবি, ওই লাশগুলো অপহৃতদের। যদিও এই নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসন কিছু নিশ্চিত করেনি। এই লাশ মেলার পর থেকে উত্তপ্ত জিরিবাম জেলা। আঁচ এসে পড়েছে ইম্ফল উপত্যকায়। মন্ত্রী এবং এমপিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। ইম্ফল পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা হয়। বিক্ষোভকারীদের রুখতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে বাহিনী। এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পাঠানো হচ্ছে আরো বাহিনী।
অন্যদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী ইম্ফলে বিজেপি এবং শরিক দলগুলোর এমপিদের জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন। রাজ্যের পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলে দাবি করে রোববার সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে কনরাড সাংমার দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ডাকাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারো কারো মতে, পরিষদীয় শক্তির বিচারে সরকারের স্থায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই এই বৈঠকের ডাক দিয়েছেন বীরেন।
Discussion about this post