যশোরের ঝিকরগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় পিয়াল হাসান (২৮) নামে এক যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পিয়াল মোবারকপুর বিশ্বাসপাড়া এলাকার কিতাব আলীর ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুনের কর্মী। পিয়ালের নামে বিস্ফোরক আইনসহ ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানিয়েছে, রাজনীতির পাশাপাশি পিয়াল ঝিকরগাছা বাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। গত ৫ আগস্ট বাজারে নিজ দলের আধিপত্যে বিস্তার নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর নুরুজ্জামান বাবুর অনুসারী পৌর ছাত্রদলের সভাপতি শামীম রেজার সঙ্গে বিরোধ হয়। সেই বিরোধের জেরে ওইদিন কাউন্সিলর বাবু, পৌর ছাত্রদল নেতা শামীম রেজাসহ কয়েকজন পিয়ালের দোকান ভাঙচুর করেন। এর জেরে পিয়ালও শামীম রেজার বাবা কামরুলকে পিটিয়ে আহত করে। সেই মামলায় সম্প্রতি তিনি আত্মসমর্পণ করলে কারাবরণ করে গত বৃহস্পতিবার তিনি জামিনে মুক্ত পান। ওইদিন রাতেই ছাত্রদল নেতা শামীম রেজাসহ কয়েকজন পিয়ালের বাড়িতে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ ও তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আবারও পিয়ালের দোকানে আসেন কাউন্সিলর বাবু, শামিমসহ কয়েকজন। সেখানে নিজ অপরাধের অনুতপ্ত হয়ে শামীম রেজার কাছে ক্ষমা চান পিয়াল। কিন্তু সেখানে পিয়ালকে ক্ষমা না করে কুপিয়ে আহত করে শামীম ও তার সহযোগীরা। এর পর প্রাণ বাঁচাতে পিয়াল বাজার থেকে পালালে তাকে উদ্দেশ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমা লক্ষভ্যষ্ট হলে তিনি আবার পালিয়ে স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেন। সেখানে একটি বারান্দায় পিয়ালকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় কাউন্সিলর বাবু ও শামীমরা। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এরপর যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের ছোট ভাই সুমন হাসান বলেন, ‘৫ আগস্ট পিয়ালের সঙ্গে কাউন্সিলর বাবু ও ছাত্রদল নেতা শামীমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলে সম্প্রতি কারাভোগ করে তার ভাই জামিনে মুক্ত হয়। এরপর শামীমরা আমার ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে। আমার ভাই কয়েক দফা তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েও মাফ পেল না। আজ তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মৃত্যুর ভয়ে বন্ধ স্কুলে লুকালেও তারা পিয়ালকে খুঁজে বের করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পরে ঝিকরগাছা উপজেলাতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের ভেতরে হামলা ভাঙচুর, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ জড়াচ্ছে নেতাকর্মীরা। নিহত পিয়াল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান নিপুনের কর্মী এবং অভিযুক্তরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোর্তজা এলাহী টিপুর অনুসারী।
তবে নিহত পিয়াল ও অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই ঘটনা পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংগঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান। তিনি বলেন, নিহত পিয়ালের নামে বিস্ফোরক আইনেসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পুলিশ চিহ্নিত করতে পেরেছে। হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু হয়েছে।
Discussion about this post