আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ইউনিয়ন ব্যাংকে থাকা টাকা তুলে নেন এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের নামে থাকা টাকা অন্যদের নামে স্থানান্তর করেন, অন্য ব্যাংকেও সরিয়ে নেন। এভাবে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয় গ্রুপটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এস আলম গ্রুপ যখন টাকা তুলে নেয়, তখন ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ২৭ আগস্ট এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে তাদের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী। এর আগে ব্যাংকটি থেকে নিজের সব টাকা তুলে নেন তিনি। এই ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও আত্মগোপনে আছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বন্দরটিলা শাখায় সাইফুল আলমের মেয়াদি আমানত হিসাব থেকে ১১ আগস্ট টাকা তুলে নিয়ে খাতুনগঞ্জ শাখায় এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির নামে জমা করা হয়। একই দিনে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যাংকের ডিটি রোড শাখায় স্থানান্তর করে রাসেল এন্টারপ্রাইজ এবং বহদ্দারহাট শাখায় ৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করে কোভ ট্রেডিংয়ে জমা করা হয়।
এস আলমের ভাই রাশেদুল আলম ৮ ও ১৪ আগস্ট কদমতলী শাখা থেকে ৮ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে একই শাখায় রাশেদুল করিম চৌধুরী ও আজিজুন্নেসার নামে জমা করা হয়। ২৮ আগস্ট এস আলমের শ্যালক আরশাদ মাহমুদ ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে পে–অর্ডারের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, এস আলম–সংশ্লিষ্ট আনসারুল আলম ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে ২০ আগস্ট দেড় কোটি টাকা তুলে নেন, পরে তা জনৈক রোকেয়া বেগম ও হাসনা হেনার নামে জমা করা হয়। এর আগে ১৮ আগস্ট জনৈক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে তা এস আলম কোল্ড রোল স্টিলমিলের হিসাবে জমা করেন।
এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট টপ টেন ট্রেডিং হাউসের নামে ইউনিয়ন ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় জমা থাকা ৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ১১ আগস্ট তুলে নেওয়া হয়। বাকি অর্থ তুলে ব্যাংকের আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জমা করা হয়। এই গ্রাহকের নামে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান শাখায় ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে, যা আদায় হচ্ছে না।
Discussion about this post