আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে নারীদের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে সকলের নজর থাকবে স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটার আবতাহা মাকসুদের ওপর। কারণ সম্ভবত তিনিই একমাত্র নারী ক্রিকেটার, যিনি বিশ্বকাপে হিজাব পরে মাঠে নামবেন। ফলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন এই স্কটিশ লেগ স্পিনার।
নারীদের ফুটবলে হিজাব পরে মাঠে নামার বহু উদাহরণ রয়েছে। ফরাসি ফুটবল দলের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা একটা সময়ে হিজাব পরেই মাঠে পায়ের জাদু দেখাতেন। বছর কয়েক আগে অবশ্য এই ইস্যুতে কড়া সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্সের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। মেয়েদের হিজাব পরে ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপের এই দেশ।
এছাড়া সৌদি আরবের বেশ কিছু নারী ফুটবলারকেও হিজাব পরে খেলতে দেখা গেছে। ক্রিকেটে সেই নজির খুব বেশি নেই। ইসলাম ধর্মাবলম্বী পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের হিজাব পরে খেলতে দেখা যায়নি। ফলে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাকসুদ যে অনন্য নজির তৈরি করতে চলছেন, তা বলাই বাহুল্য।
পাকিস্তানি শরণার্থী পরিবারের সন্তান আবতাহা বর্তমানে স্কটল্যান্ডের জাতীয় দল ছাড়াও খেলেন মিডলসেক্স, সানরাইজার্স ও বার্মিংহাম ফিনিক্সের হয়ে। মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্লাব ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই ডানহাতি লেগ স্পিনারের।
জাতীয় দলের হয়ে মাকসুদ যখন প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন, তখন সদ্য ১২ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ১৭ দলের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলেন এই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার। সেখান থেকে প্রতিভার জোরে সিনিয়র টিমে চলে আসেন আবতাহা।
ক্রিকেট ছাড়াও তাইকোন্ডোতে আগ্রহ রয়েছে স্কটিশ এই ক্রিকেটারের। দক্ষিণ কোরিয়ার মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে দেশের পতাকা বহনকারী ছিলেন আবতাহা।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের জার্সিতে খেলেন মাকসুদ। এরপরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্যাচেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই দেশের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন মাকসুদ। উগান্ডার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় দলে খেলছেন এই নারী ক্রিকেটার।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে সবাইকে চমকে দিয়ে ধূমকেতুর মতো ওপরে উঠে এসেছে স্কটল্যান্ড। ইউরোপে বাছাই পর্বের ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিতে যায় মাকসুদের দল। এই জয়গুলোর নেপথ্যে হিজাব পরিহিতা লেগ স্পিনার যে বড় ভূমিকা নিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
বাছাই পর্বে ৫টি ম্যাচ জিতে ‘গ্লোবাল কোয়ালিফায়ারে’ চলে গিয়েছিল স্কটল্যান্ড। পয়েন্ট তালিকায় শ্রীলঙ্কার ঠিক পরেই ছিল তাদের স্থান। এরপর আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন মাকসুদরা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আবু ধাবিতে ছিল সেই ম্যাচ।
ওই ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে দাঁড়াতেই দেয়নি স্কটিশ মেয়েরা। ৮ উইকেটের ব্যবধানে জয় পায় তারা। যা ইতিহাসে জায়গা করে দেয় তাদের। এই জয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা পেয়েছে স্ককল্যান্ড।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ায় রীতিমতো উচ্ছ্বসিত মাকসুদ। তার কথায়, ‘সত্যি কথা বলতে গত কয়েক মাস ধরে জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছি। এটা একটা স্বপ্নের মতো। দল হিসেবে মাঠে আমরা সেরাটা দিতে পেরেছি। যা আমাদের পতাকা নিয়ে দৌড়তে সাহায্য করেছে। সেই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।’
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনকে ১০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম বলে উল্লেখ করেছেন মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক লড়াই করেছি। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। শেষে এখানে যে আসতে পেরেছি, তার জন্য দারুণ লাগছে।’
Discussion about this post