সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি স্বামী-স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রী জেবুন্নেসা আক্তার। অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপির একাধিক মামলা রয়েছে। গোল্ডেন ভিসা নিয়ে দুজন বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে গত বছরের ডিসেম্বরে দেওয়া আদেশে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা–ও জানতে চেয়েছেন আদালত।
মোহাম্মদ আলী ইমাম গ্রুপের চেয়ারম্যান। নব্বইয়ের দশকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করত তাঁর প্রতিষ্ঠান ইমাম ট্রেডার্স। পরে গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় গার্মেন্টস, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। একটি সূত্র জানায়, এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বেশির ভাগ বিনিয়োগ করা হয়েছে জমি কেনায়।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, আদেশে বিচারক বলেন, দেশের অর্থ পাচার করে দুবাইয়ে নানা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামে ১৫টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে। ১০ বছর আইনি লড়াই চালিয়েও ওই টাকা উদ্ধার করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
বিচারক বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করার মাধ্যমে এই ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এই শীর্ষ ঋণখেলাপিরা কোনো ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংকের বিনিয়োগ খাতে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিচারক আদেশে আরও বলেন, নাগরিকদের আমানতের টাকা ঋণের নামে মুষ্টিমেয় দুষ্কৃতকারীর বিদেশে পাচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নাগরিকদের আমানতের অর্থ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
Discussion about this post