হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, বিগত ১৬ বছর অন্ধকার সময়ে আমাদের বুকে চেপে বসেছিল এক জালিম সরকার। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল এদের হয়তো আর নামানো সম্ভব হবে না। তাদেরও বিশ্বাস ছিল তাদের কেউ নামাতে পারবে না। তারা মসনদকে জবরদখল করে বসেছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল লাখো মানুষকে হত্যা করে হলেও শেখ হাসিনা ক্ষমতা চালিয়ে যাবেন।
বুধবার সকালে খেলাফত মজলিস সোনারগাঁ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ঐতিহাসিক হাবিবপুর ঈদগাহ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় ও প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সোনারগাঁ শাখার সভাপতি হাফেজ আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মহিউদ্দিন খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সোনারগাঁ শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি মুহাম্মাদ সাইদুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার বিচার বাংলার মাটিতে করতে হবে। তাকে এ দেশে ধরে আনতে হবে। সব হত্যা ও গণহত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের আদায় করতে হবে। আমরা বলেছিলাম ভাস্কর্য করার দরকার নেই। আপনার পিতাকে আর জাতির সামনে অপমানিত করবেন না। এ কথা বলায় আমাকে গ্রেফতার করলেন। জাতীয় সংসদে আমাকে নিয়ে আক্রমণ করলেন। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান লেলিয়ে দিলেন। আমাদের কথা সেদিন মানলে আজ সারা দেশে এ লাঞ্ছনা বরণ করতে হতো না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রিয় ভাই মাওলানা ইকবাল সাহেবকে স্মরণ করছি। তার মৃত্যু আমাকে অনেক বেশি মর্মাহত করেছে। এটি আমার কারাজীবনের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা। আমি সোনারগাঁ থানা ও বন্দর, গজারিয়া, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সোনারগাঁয়ে শত শত মানুষের ওপর নিপীড়নের জন্য চিহ্নিত কিছু মানুষ দায়ী। তাদের তালিকা করে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হলে তাদের হৃদয়ের আবেগ বুঝতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করে হয়তো ক্ষমতায় থাকতে পারবেন; কিন্তু ক্ষমতা চিরস্থায়ী হবে না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। দিল্লিতে বসে কেউ যদি স্বপ্ন দেখে শাহজালালের বাংলাদেশকে কেউ নরেন্দ্র মোদিদের স্বার্থের বলি বানাবে। আমরা বলতে চাই রক্ত দিয়ে যেভাবে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়ার পরও ফ্যাসিবাদের জায়গা বাংলাদেশে হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ কখনো ফ্যাসিবাদকে মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, এ সংগ্রাম জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগস্টে সফলতা পেয়েছে। কিন্তু এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ সংগ্রামে অনেক ভাইয়ের রক্ত রয়েছে। ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ২০২১ সালে মোদির মতো নরঘাতককে নিয়ে হেফাজত প্রতিবাদ জানিয়েছিল, এ অপরাধে পাখির মতো গুলি করে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছিল। ২০২৪ নির্বাচনেও দেখেছেন গোটা দেশের মানুষকে জিম্মি করে দিল্লির সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়েছিল।
Discussion about this post