বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়বো।
বুধবার (২১ আগস্ট) চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও শহীদ ওমর ফারুকের পরিবার পরিজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তাদের প্রতি সমবেদনা ও দোয়া কামনা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান চট্টগ্রামে আসেন।
এ সময় তিনি বিভিন্ন সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ছেলেরা একেকজন দ্বীনদার, সৎ, মেধাবী ও চরিত্রবান ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা জীবন দেয়া-নেয়ার মালিক। এখানে চিরস্থায়ী থাকার সুযোগ নেই। তারা যে কাজে শহীদ হয়েছে আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
জামায়াতের আমীর আরও বলেন, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন। আসমান থেকে বরকতের দরজা খুলে দিন। জুলুম থেকে বাংলাদেশকে চির জীবনের জন্য মুক্ত করুন। মেহেরবানী করে আল্লাহর দ্বীনকে এ জমিনে কায়েম করে দিন।
প্রয়োজনে আল্লাহর দ্বীনের জন্য আমাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। যারা জীবন দিয়েছে তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন। আল্লাহ শহীদদের পরিবার পরিজন ও আমাদেরকে সুস্থতা দান করুন। বাংলাদেশের জমিনে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে ইনসাফের বাংলাদেশ গড়বো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও শহীদ ওমর ফারুকের পরিবার পরিজনের খোঁজখবর নেয়া, তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও দোয়ার জন্য ছুটে আসেন।
তিনি আজ সকাল ৮ টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছলে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর নেতাকর্মী ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনগণ উপস্থিত হয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এরপর সাড়ে ৯ টায় তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দেখতে যান। তিনি তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং পাশে কিছুক্ষণ সময় কাটান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন। তিনি ডা.শফিকুর রহমানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় বহু এলাকাবাসী ও ছাত্র-জনতা উপস্থিত হয়ে তাঁকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান।
মেডিকেলে সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে একটা পরিবর্তন হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের শাহাদাত আল্লাহ কবুল করুন, আর যারা আহত হয়েছে তাদেরকে দ্রুত সুস্থ করে দিন। এখানে আহতদের মধ্যে যাদেরকে দেখেছি তাদের প্রত্যেকের মুখে আমরা হাসি দেখেছি। আন্দোলনের জন্য নিজেদের রক্ত দিতে পেরে তারা প্রত্যেকেই গর্বিত।
আর হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ আহতদের ভালো সেবা দেয়ার জন্য। আমরা উনাদের কাছে আহতদের আমানত হিসেবে রেখে যাচ্ছি। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেখানে আর কখনো যেন স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ফিরে না আসে। জুলুম নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়।
সকাল ১০টায় তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ ওমর ফারুকের পরিবারের সাথে সাক্ষাতের জন্য লালখানবাজারস্থ চাঁনমারি রোডের টাঙ্গির পাহাড়ের বাসায় যান। এ সময় বিপুল সংখ্যক জনতা লালখানবাজার মোড়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
এছাড়াও তিনি মুরাদপুরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর ইপিজেডের (প্রি-পোর্ট) বাসায় যান। তিনি শহীদ শান্তর বাবা-মা, নানী ও ছোটবোনের সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের পারিবারিক খোঁজখবর নেন ও দোয়া কামনা করেন। বিদায় মুহূর্তে তিনি উপস্থিত ছাত্র-শ্রমিক সর্বস্তরের জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post