বুকভরা আশা নিয়ে জুলাই মাসের ১৪ তারিখে উত্তরা নওয়াব হাবিবুল্লাহ বাহার মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মানবিক বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন টঙ্গীর রাহাত হোসেন শরীফ (১৬)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাহাত স্বপ্ন দেখতেন লেখাপড়া শেষ করে জার্মানি যাওয়ার। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বন্ধুদের সঙ্গে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গেলে একটি গুলি রাহাতের সবকিছু থমকে দেয়। চুরমার হয়ে যায় তার সব স্বপ্ন। এমন কথাই জানালেন নিহত রাহাতের মা স্বপ্না আক্তার। নিউজ যুগান্তর
নিহত রাহাত হোসেন শরীফ নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার বাহেরচর গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম মিয়ার একমাত্র সন্তান। তিনি টঙ্গীর গোপালপুর এলাকার জনৈক আলী আকবরের ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করে টঙ্গী শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত রাহাতের মা স্বপ্না আক্তার জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে রাহাতই ছিল তাদের একমাত্র সন্তান। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়। একপর্যায়ে বিকালে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় পৌঁছলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মাঝে পড়েন তারা। এ সময় একটি গুলি রাহাতের মাথায় বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। খবর পেয়ে তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে তার লাশ উদ্ধার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী নিয়ে দাদার কবরের পাশে দাফন করেন।
আদরের সন্তানকে হারিয়ে রাহাতের মা পাগলপ্রায়। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। সৌদি প্রবাসী বাবা সেলিম মিয়া পুত্র শোকে পানাহার ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
রাহাতের মা আরও বলেন, সংসারে অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে তা কখনো বুঝতে দেইনি। রাহাত জার্মানি যাবে সে আশায় বুক বেঁধে লেখাপড়া করে যাচ্ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা শতকষ্ট করেও টাকা-পয়সা জোগাড় করছিলাম। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। পুলিশের একটি গুলিতে, একটি ভবিষ্যৎ, একটি স্বপ্ন নিমিষেই চুরমার হয়ে গেল।
তিনি বলেন, ছেলেকে অবলম্বন করেই বেঁচে ছিলাম, এখন কাকে নিয়ে আমরা বাঁচব। ছেলে আমার ২০ বছরের সাধনার ধন। আমার ছেলে কারও সঙ্গে কখনো ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়াতো না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? কার কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাইব।
Discussion about this post