দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় সৌদি প্রবাসী যুবক দেশে ফিরে মরুভূমির খেজুর চাষে সফলতা অর্জনে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছে। দিনাজপুর ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সজনপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন।
প্রবাসী বলেন, জীবিকার তাগিদে সৌদি ও কুয়েতে পাড়ি দিয়ে প্রায় ২০ বছর প্রবাসী জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকাকালীন মরুভুমির ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যকজ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফেরার সময় ১২ কেজি পাকা খেজুর নিয়ে আসেন। সেই খেজুরগুলো থেকে চারা তৈরি করেন নিজেই।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৩০ শতক জমিতে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর বাগান গড়ে তোলেন। এখন খেজুর গাছ গুলোর বয়স ৪ থেকে ৫ বছর। গত ২০২২ সালে তার বাগানে প্রথম ৩টি গাছে ফল এসেছিল। সেই চারা গাছগুলো এখন পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছেই থরে থরে ঝুলে পড়েছে খেজুর ফল। সেই খেজুর ফলের মিষ্টি স্বাদ এখন দিনাজপুরসহ সারা দেশে ছড়িয়েছে। মরুভূমির এ খেজুর গাছ ও ফল দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উৎসুক নারী- পুরুষ ও শিশুরা।
উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিয়ে ছিলাম। সেখানে চাষ হওয়া খেজুর দেখে নিজ দেশের মাটিতে খেজুর চাষের স্বপ্ন জাগে। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে পাকা খেজুর এনে পরীক্ষা মূলক চারা তৈরি এবং ইউটিউবের সহায়তায় ৩০ শতক জমিতে পরীক্ষা মূলক ভাবে ২৯টি খেজুর গাছের চারা রোপণ করি। বর্তমানে দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছি খেজুর বাগান। অনেকে চারা গাছ কিনতে অগ্রীম অর্থ দিয়ে রাখছেন। গাছে ফল আসলেই প্রতি বছর ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৩ টি গাছে প্রচুর পরিমাণে খেজুর আসে। তারপর সে ফলগুলো স্থানীয়দের খাওয়ানো সহ কিছু চারা তৈরি করি। চলতি বছর ১৯টি গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছের ৮ থেকে ৯টি কাঁদিতে (গোছায়) খেজুর ধরেছে। ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুরের ওজন এক কেজি হবে। খেজুরের বীজ থেকে চারা গাছ হতে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। এ খেজুর বাগান করতে প্রয়োজন উঁচু জমি।
এ উদ্যোক্তা বলেন, চারাগাছ রোপণের কয়েক বছরেই ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিটি চারা বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চারাগাছ সংগ্রহ করছেন লোকজন। একটি খেজুর গাছ ৭০ থেকে ৮০ বছর ধরে ফল দেয়। বর্তমানে বাগানে উৎপাদিত খেজুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যে দেড় হাজার চারা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, প্রবাসী জাকির হোসেন মরু ভুমির খেজুর ফুলবাড়ীর মাটিতে ফলিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তার উৎপাদিত খেজুর ও খেজুর চারা বাজারজাত করণের বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
Discussion about this post