সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার জব্দের আগেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দুদকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ মে তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তবে এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর মতো করে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তর করেছেন কিনা, সে তথ্যও পাওয়া যায়নি।
তিনি দেশে আছেন কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবার নিয়ে বেনজীর দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
বেনজীরের সম্পদের বিষয়ে যেসব সরকারি সংস্থা খোঁজ রাখছে, তাদের মধ্যে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, গত সপ্তাহে তার অ্যাকাউন্টগুলো ফাঁকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যখনই কেউ বুঝতে পারেন তাকে ধরার চেষ্টা চলছে, তখনই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য টাকা তুললেও নগদে রেখেছেন, নাকি অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন তা বের করা সম্ভব।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুরো বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে বলেন, ডকুমেন্টের ভিত্তিতে কাজ করে ব্যাংক। ফলে সুনির্দিষ্ট আদেশের কপি ছাড়া মৌখিক কোনো তথ্য কিংবা গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে কারো অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে বা স্থানান্তর না করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, আদালত কারো অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দিলে পরে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন। এ রকম ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক টাকা তুলতে না দিলে বিপদে পড়বে।
তিনি বলেন, সাধারণভাবে এ ধরনের ব্যক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে নিজস্ব লোক থাকে। ফলে গোপনে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার পত্রিকায় লেখালেখি এবং দুদকের কার্যক্রমের ফলে এমনিতেই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলতে পারেন। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নগদে তুলে বিশ্বস্ত কারো কাছে রাখা হয়।
এখন দেখার বিষয় বেনজীর ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন প্রোফাইলের নিয়ম মেনে টাকা উত্তোলন হয়েছে কিনা। আবার টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তরের পর ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) এবং নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) করেছে কিনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিংসহ এ ধরনের অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। বুধবার (২৯ মে) তিনি ওই জাতীয় দৈনিককে বলেন, দুর্নীতিবাজরা আগেই টাকা সরিয়ে ফেলে, এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যমান ব্যাংকিং নিয়মে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে সরকার এখন মিডিয়ায় দেখাতে চাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদ এক দিনে বেনজীর হননি। তাকে পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজি এ সরকারই বানিয়েছে। হঠাৎ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বহির্বিশ্বে দেখানো হচ্ছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর।
Discussion about this post