বিদেশি কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয় বেতন ও প্রণোদনা কমিয়ে আনছে সৌদি আরব। উচ্চ বেতনের আশায় নির্মাণ, উৎপাদন খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবীরা একসময় দেশটিতে ভিড় জমাতেন। ব্যয় সংকোচন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাসের কারণে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের চারটি নিয়োগকারী সংস্থা।
খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক রূপান্তরের পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০৩০’-এর অর্ধেক পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য—জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পর্যটন, আবাসন, খনি ও আর্থিক পরিষেবার মতো খাতগুলো সম্প্রসারণ করা। এ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটি বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বিলম্বের চাপ এখন দেশটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
দুটি সূত্র জানিয়েছে, বছর দুয়েক আগেও বিদেশি কর্মীরা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত বেতন, অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তি সুবিধা পেতেন বা আলোচনার মাধ্যমে আদায় করে নিতে পারতেন। এখন সে সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
নিয়োগকারী সংস্থা বয়ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাগদি আল জেইন বলেন, ‘একদিকে এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি ব্যয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে আনছে, অন্যদিকে প্রচুর কর্মী এই অঞ্চলে আসতে আগ্রহী।’ তিনি আরও বলেন, এর ফলে নিয়োগকর্তারা বেতন প্যাকেজ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন এবং এটি নিশ্চিতভাবেই ঘটছে।
এ পরিবর্তন সৌদি আরবের ৯২৫ বিলিয়ন ডলারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) বৃহত্তর কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের প্রতিফলন। অবকাঠামো ও রিয়েল এস্টেটনির্ভর মেগা প্রকল্পগুলোয় ধাক্কা খাওয়ার পর তহবিলটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), লজিস্টিকস ও খনির মতো খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে, যেগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এই মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মরুভূমিতে পরিকল্পিত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ভবিষ্যৎ নগরী ‘নিওম’ এবং ২০২৯ সালের এশিয়ান উইন্টার গেমসের আয়োজক পার্বত্য পর্যটনকেন্দ্র ‘ট্রোজেনা’। মন্তব্যের এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি পিআইএফ ও নিওম।
৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি বেতন সুবিধা আর নেই
মেগা প্রকল্পগুলোয় কর্মীর সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরব আন্তর্জাতিক দক্ষ জনশক্তির দিকে ঝুঁকেছিল। ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি বেতনের সুবিধা এখন আর নেই সৌদি আরবে। দুবাইভিত্তিক নিয়োগ পরামর্শক সংস্থা টাস্কান মিডল ইস্টের সিইও হাসান বাবাত জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রজেক্ট ম্যানেজাররা সৌদি আরবে প্রায় ১ লাখ ডলার বেতনের প্রস্তাব পেতেন—যে পদে আমিরাতে বেতন ছিল প্রায় ৬০ হাজার ডলার।
কিন্তু ব্যয় সংকোচন শুরু হওয়ায় নিওমসহ পিআইএফ-সমর্থিত উদ্যোগগুলো এখন বিলম্বের মুখে। কামকো ইনভেস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালেও সৌদি প্রকল্পের গতি মন্থর ছিল এবং বছরের প্রথম ৯ মাসে পুরস্কৃত প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
তেলের কম দাম সরকারি অর্থায়নে চাপ বাড়িয়েছে এবং রাজস্বঘাটতি গভীর করেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, বাজেট ভারসাম্য বজায় রাখতে সৌদি আরবের তেলের দাম প্রায় ১০০ ডলারের কাছাকাছি থাকা প্রয়োজন।
সিইও হাসান বাবাত বলেন, ‘সৌদি আরবে উন্নয়নের গতি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে নিয়োগের ক্ষেত্রে। এখন নিয়োগকর্তারা আগের তুলনায় বেশি দর–কষাকষি করছেন।’
টাস্কানের এ বছরের অক্টোবর বেতন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমিত বাজেটে সৌদি কোম্পানিগুলো এআই বা ডিজিটালের মতো খাতের ‘হট জব’-এ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।


























