পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ পাড়ি জমান বিদেশে। তবে পরবাসে কঠোর পরিশ্রম ও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অনেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবাসের মাটিতেই। তাদের মরদেহ দেশে ফেরাতে নানান জটিলতা ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন স্বজনরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মরদেহ পরিবহনের ব্যয় জোগাতে হয় চাঁদার টাকা বা প্রবাসী সহকর্মীদের অনুদানে।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরবে মারা যান ফেনীর মোহাম্মদ ইলিয়াস। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর তার পরিবার জানতে পারে এ খবর। তবে প্রায় এক মাস পর দূতাবাস থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি আসে। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের ইচ্ছা থাকলেও খরচের জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। ২০ বছরেরও বেশি সময় সৌদি আরবে কাটানো এই প্রবাসীর দাফন শেষে মরদেহ সেখানেই সমাহিত করা হয়।
নিহত ইলিয়াসের স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম জানান, দূতাবাস থেকে তাদের জানানো হয়েছে— তার স্বামীকে সৌদি আরবেই দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মরদেহ দেশে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু খরচের ব্যবস্থা করতে পারিনি।”
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে একটি মরদেহ দেশে পাঠাতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এই অর্থ জোগাড় করতে পরিবারকে পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে। মাঝে মাঝে কিছু সংগঠন সহযোগিতা করলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবাসীদের নিজেদের চাঁদার টাকাতেই দেশে ফেরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মরদেহ। প্রবাসীরা জানান, স্থানীয়ভাবে মরদেহ পাঠাতে ৭ থেকে ৮ হাজার দিরহাম পর্যন্ত খরচ হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বৈধভাবে কর্মরত প্রবাসী মৃত্যুবরণ করলে তার মরদেহ দেশে পাঠানোর দায়িত্ব থাকে নিয়োগকর্তার ওপর। তবে কাগজবিহীন বা অনিবন্ধিত প্রবাসীদের ক্ষেত্রে স্থানীয় কমিউনিটি বা প্রবাসী সংগঠনগুলো সহায়তা করে। বিএমইটির ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স বা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ থাকলে বোর্ডের অর্থায়নে মরদেহ দেশে আনা হয়। আর সদস্যপদ না থাকলে মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকে ব্যয় বহন করা হয়।