মালয়েশিয়ায় স্বর্ণপদক পেয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক ড. লায়লা নাহার। গ্রিন টেকনোলজি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর মাশরুম ক্র্যাকারর্স উদ্ভাবনে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে এ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ১ নভেম্বর থেকে ৩ নভেম্বর উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতানে শুরু হয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হয়।
৩ নভেম্বর সম্মেলনের শেষ দিন ড. লায়লা নাহারসহ ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতানের ৮ জনকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে। এ সময় ছিলেন- ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতানের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. রাজলি বিন চী রাজাক, মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি (ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ড. মোহাম্মদ জাবরি বিন ইউসুফ, ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর (রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেসন) প্রফেসর ড. আরহাম বিন আব্দুল্লাহ, ডাইরেক্টর অফ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন প্রফেসর ড. আহমাদ জাইদ বিন সোলাইমান, ইউএমকের ডাইরেক্টর অফ আইসিডি, প্রফেসর ড. জুলি বিনতে মোহাম্মাদ।
প্রতি দুই বছর পরপর সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কমিউনিটি কলেজ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, শিল্প/এজেন্সির বাছাই করা গবেষকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তাদের এ পদক দেওয়া হয়।
PECIPTA’22 মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত উদ্ভাবনের ওপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রদর্শনীতে মালয়েশিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক, কমিউনিটি কলেজ, স্কুল, শিল্প/এজেন্সি থেকে মোট অংশগ্রহণকারী ছিল ৪৭৭ জন গবেষক।
ড. লায়লা নাহার, রাজশাহী পিএন গার্লস হাইস্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৯৭ সালে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ২০০৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ থেকে তার মাস্টার্স এবং ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (UPM) থেকে পিএইচডি (মাইকোলজি অ্যান্ড প্ল্যান্ট প্যাথলজি) ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি বর্তমানে কৃষি-ভিত্তিক শিল্প অনুষদে, ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতান (UMK), ২০১৪ সালের জুন থেকে কৃষিপ্রযুক্তি প্রোগ্রামে সিনিয়র লেকচারার/সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন। ইউএমকেতে যোগদানের আগে, তিনি ২০১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়াতে পোস্টডক্টরাল ফেলো ছিলেন।
২০১৪ থেকে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতানে তার শিক্ষকতার সময়, তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একজন সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, প্যাথোজেনিক জীবাণু শনাক্তকরণ, উদ্ভিদ-প্যাথোজেন মিথস্ক্রিয়া, ছত্রাকের নির্যাস থেকে জৈব হার্বিসাইড যৌগ শনাক্তকরণ, মাশরুম চাষ, ব্যয়িত মাশরুম সাবস্ট্রেট থেকে জৈবসার উৎপাদন এবং পণ্য বিকাশের মতো বিভিন্ন ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে জড়িত।
তিনি হাই ইম্প্যাক্ট জার্নালে ৪০টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন (১৪ এইচ-ইনডেক্স), ৩টি বইয়ের অধ্যায় এবং ২০টি প্রসিডিংস পেপার। তার ফলাফল এ পর্যন্ত একটি ট্রেডমার্ক এবং দুটি কপিরাইট পেয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবেও আমন্ত্রিত হয়েছেন। উচ্চ শিক্ষার পাঠদান এবং কোর্স পরিচালনার পাশাপাশি লায়লা নাহারের গবেষণার কিছু অংশ স্থানীয় কমিউনিটির উন্নয়নমূলক কাজেও জড়িত।
রাজশাহী উপ-শহর নিবাসী মোহাম্মদ নাসিম আলী এবং হোসনে আরা বেগমের মেয়ে ড. লায়লা নাহার বর্তমানে ইউএমকেতে কৃষিপ্রযুক্তি প্রোগ্রামে সিনিয়র লেকচারার/সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন। ড. লায়লা নাহারের এই সাফল্যর পেছনে আছে মা-বাবার সঙ্গে স্বামী সাইনুল ইসলামের অনুপ্রেরণা ও সাহস।
পদক পাওয়ার অনূভূতি জানাতে গিয়ে ড. লায়লা নাহার বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি গবেষকরা সুনামের সাথে কাজ করছেন। মালয়েশিয়াতেও এর ব্যতিক্রম নয়, তার প্রমাণ দিতে পেরে গর্ববোধ করছি।
Discussion about this post