রেমিট্যান্সের ধস ঠেকাতে এবার প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে রেমিট্যান্সের ওপর শতকরা ২ ভাগ আর্থিক প্রণোদনা রয়েছে। এখন তা বাড়িয়ে আড়াই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ বর্তমানে বিদেশ থেকে কেউ ১০০ টাকা বৈধ পথে পাঠালে তাকে অতিরিক্ত দুই টাকা যোগ করে ১০২ টাকা দেয়া হচ্ছে। প্রণোদনা বাড়ানোর ফলে আগামীতে তারা ১০২ টাকা ৫০ পয়সা করে পাবেন। আগামীকাল ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই সংক্রান্ত একটি বিবৃতি আসতে পারে। তবে নতুন এই প্রণোদনা হার আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা খাতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রণোদনা বাড়ানোর কারণে আগামী অর্থবছরে এই খাতে আরো আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, গেল সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়, ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা হার বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রণোদনার হার বাড়িয়ে যেন আড়াই শতাংশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এই পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আসা হ্রাস পেয়েছে ২২৯ কোটি ডলার বা ১৯ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি কমেছে, যা বিগত ১৮ মাসের সর্বনিম্ন। নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এটি অক্টোবর মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। সেই সাথে এটি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার কম। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
এ দিকে করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি এসেছে গেল ২০২০-২১ অর্থবছর। সেই অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৯৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিল। ফলে পুরো অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা দুই লাখ ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকার বেশি।
এর আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। একক অর্থবছরে এর আগে কখনো এত রেমিট্যান্স আসেনি। এক অর্থবছরে এত প্রবৃদ্ধি কখনো হয়নি। মূলত রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বমুখিতার সূচনা হয় গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে। কারণ সে অর্থবছর থেকেই সরকার সর্বপ্রথম যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে। যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে, তারাই রেমিট্যান্স প্রাপকদের ২ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে দেয়। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন। পরে সরকারের পক্ষ থেকে এ ২ শতাংশ প্রণোদনা ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেয়া হয়। শুধু সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনাই নয়, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ ২ শতাংশ প্রণোদনা অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ অর্থ রেমিট্যান্স প্রাপকদের প্রদান করে আসছে।
কিন্তু এই প্রণোদনা দেয়ার পরও করোনার পরবর্তীতে কয়েক মাসে রেমিট্যান্সে পরিমাণ ব্যাপক কমেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা হুন্ডি বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। এর পাশাপাশি করোনার সময় দেশে বিপুলসংখ্যক বিদেশী শ্রমিক চলে আসে। মূলত তারাই বিদেশে গচ্ছিত তাদের অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে নিয়ে আসে। যার একটি প্রভাব দেখা যায় রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর।
Discussion about this post