দুবাই ভিত্তিক লটারি আয়োজন প্রতিষ্ঠান মাহজুজের ড্রতে ১ মিলিয়ন দিরহাম জিতেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি আবদুল কাদের। ৩২ বছর বয়সী ক্রেন অপারেটর প্রবাসী বাংলাদেশি আবদুল কাদের, আরব আমিরাতে যার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই হঠাৎ সাপ্তাহিক লাইভ মাহজুজ ড্রতে দ্বিতীয় পুরস্কার জেতার পর কোটিপতি হয়ে গেলেন এই প্রবাসী।
মাহজুজের ড্রতে প্রথম বাংলাদেশি এবং এ বছর ড্রয়ের ১৬ তম কোটিপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন আব্দুল কাদের। প্রবাসী আব্দুল কাদের বুধবার (১৩ অক্টোবর) লটারিতে জিতেছেন ১০ লাখ দিরহাম, বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক খালিজ টাইমস বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ।
অভাবের তাড়নায় সহায় সম্বল বিক্রি করে দশ বছর আগে দুবাই পাড়ি জমান আব্দুল কাদের। ক্রেন অপারেটরের কাজ করেন তিনি। দশ বছরে ব্যাংকে টাকা জমানো তো দুরের কথা ব্যাংক হিসাবও খোলার সুযোগ হয়নি তার। থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে মজুরির প্রতিটি দিরহাম দেশে পাঠিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের কাছে। যেহেতু উপার্জনের অধিকাংশই তার পরিবারের জন্য বাড়িতে পাঠান, তাই ফোনের জন্য ইন্টারনেট ডেটা প্ল্যান কেনাও তার পক্ষে কঠিন ছিল।
খালিজ টাইমসকে কাদের জানান, লটারিতে দ্বিতীয় স্থান জয়ের পর আবেগে-উত্তেজনায় তাৎক্ষনিকভাবে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ‘আমি আসলে এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে, ১০ লাখের মধ্যে কতগুলো শূণ্য থাকে। যতদিন ধরে দুবাই আছি, থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে প্রতিটি দিরহাম বাংলাদেশে পাঠাতে হয়েছে আমাকে।
কাদের আরও জানান, দেশে পাঠানো টাকায় যেন টান না পড়ে, সেজন্য ফোনে ইন্টারনেট সংযোগবাবদও নিয়মিত অর্থ ব্যয় করেন না তিনি।‘গতরাতে যখন ওই ড্র অনুষ্ঠান লাইভ প্রচার হচ্ছিল, আমি নাইটশিফটে কাজ করছিলাম। ফোনে সেই অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ডাটা না থাকার কারণে বার বার বাফারিং হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধুকে ড্রয়ের ফলাফল চেক করার অনুরোধ করি। সেই জানিয়েছে- দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছি আমি।’
দুই সন্তানের পিতা আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, পুরস্কার জেতার খবর শোনার পর প্রথমেই তার মনে পড়েছে স্ত্রীর কথা। নিজের স্ত্রীকে খুবই ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিসম্পন্ন নারী হিসেবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘টাকা পাওয়ার পর আমি প্রথমেই স্বর্ণের দোকানে যাব এবং তার জন্য কিছু স্বর্ণালঙ্কার কিনব। গত ১০ বছর ধরে দুবাই আছি, কিন্তু এতদিনে তাকে এক রতি স্বর্ণও উপহার দিতে পারিনি।
পুরস্কারের টাকার একটা অংশ বাবা ও ভাইকে দেব যার ব্যাপক অর্থকষ্টে রয়েছেন। বাকি টাকা দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করে তা ভাড়া দেব। যদি একটি বাড়ি নির্মাণ করে তা ভাড়া দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি নিশ্চিত আয়ের উৎস তৈরি হবে।
পুরস্কারের অর্থের বাকি অংশ সন্তানদের শিক্ষার জন্য তুলে রাখা হবে উল্লেখ করে খালিজ টাইমসকে কাদের বলেন, ‘অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়ার পর স্কুল ছেড়ে দিয়ে কাজে নামতে হয়েছে। কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তানদের পরিণতিও আমার মতো হোক। লেখাপড়া শিখে তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়, এই টাকার একটি অংশ সেজন্য বরাদ্দ থাকবে।’
আব্দুল কাদের আরো বলেন এটা এতই ভালো যে, আমার মতো মানুষ, যারা খুব ভালো কাজ করে না, তারাও মাহজুজে অংশ নেওয়ার সামর্থ্য রাখে।
Discussion about this post