আমিরাত সংবাদ ডেস্ক : সরকারি ভর্তুকির অর্থে বিদেশে বিলাস বহুল জীবনযাপন ও অর্থ পাচার মামলায় পলাতক থাকার অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আলোচনায় আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী শাহজাহান বাবলু। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে খোঁজ নিলে জানা যায়, আরব আমিরাতে তার জীবনযাপন ও দুবাই-সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়িক নানা তথ্য। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে এসবি পুণ্য গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহজাহান বাবলু নিজেকে পলাতক নয় বলে দাবি করেন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন দুবাইতে তার বৈধভাবে বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচারকারী হিসেবে নাম আসার বিষয়টিও গণমাধ্যমের অসত্য অভিযোগ বলে দাবি তার। তবে কমার্স ব্যাংকে তার ১৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা স্থিতি ঋণের প্রমাণাদি রয়েছে। এই ঋণ সম্পর্কে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে শাহজাহান বাবলু। কমার্স ব্যাংক সূত্রেও একই ঋণের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ী থাকেন দুবাইয়ের জুমেইরা এলাকায়। বিএমইটি’র কার্ড নিয়ে ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত আসেন তিনি। দুবাইতে গড়ে তুলে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পুণ্য গোল্ড জুয়েলারি ট্রেডিং এলএলসি, পুণ্য জেনারেল ট্রেডিং ও পুণ্য ফুডস্টাফ ট্রেডিং নামক লাইসেন্সের মাধ্যমে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা-বাণিজ্য। একপর্যায়ে সিঙ্গাপুরেও বাড়ায় ব্যবসার পরিধি। পাশাপাশি সার উৎপাদন, কীটনাশক ও বীজ সরবরাহ সহ দেশেও রয়েছে তার বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। ইতিপূর্বে ২০১ ১ সালেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছিল। দীর্ঘদিন তদন্তের পর অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় দুদকের দেওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আদালত ওই মামলা দুটো খারিজ করে দেয়।
এদিকে, ভর্তুকির টাকায় বিদেশে তার বিলাস বহুল জীবনযাপনের বিষয়টি গণমাধ্যমে এলেও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিদেশে রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা কমার্স ব্যাংক থেকে কোনো ভূর্তুকি গ্রহণ করেনি শাহজাহান বাবলু। পক্ষান্তরে গত ২০১৭ থেকে ২০১৯ অর্থ বছরে জনতা ব্যাংক দুবাই শাখা থেকে বাংলাদেশে জনতা ব্যাংক লোকাল অফিস ঢাকায় তার নিজস্ব একাউন্টে ৪১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ২ শত ৫০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।
শাহজাহান বাবলুর টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির বিপরীতে কমার্স ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা লেনদেনর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে কমার্স ব্যাংক দিলকুশা শাখার ম্যানেজার আশীষ কুমার গোস্বামী বলেন, টেরাকোটা টাইলসের নামে বিদেশে কোনো অর্থ পাচার হয়নি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাছে আমরা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম এসবি এক্সিম বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে টাইলস বা কোনো পণ্য রপ্তানি হয়েছে কি-না। কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি মর্মে কাস্টম হাউসের দেওয়া ওই প্রতিবেদন ব্যাংকে সুরক্ষিত আছে।
এই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনো মালামাল রপ্তানি না হলেও বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে কমার্স ব্যাংকে এসবি এক্সিম বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানির নামে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার এসেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯১ কোটি টাকা। কমার্স ব্যাংকের ডিএমডি কাজী রেজাউল করিম জানান, শাহজাহান বাবলু কমার্স ব্যাংক থেকে ১৭৩ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। ব্যাংকে তার পূর্বের ৪৮ কোটি টাকা ঋণ থাকায় নতুন ঋণের বিপরীতে এই টাকা কেটে রাখা হয়। বর্তমানে ব্যাংক তার কাছে ১৬৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ঋণ নেওয়ার পর শাহজাহান বাবলু ব্যাংকে পুনঃতফশিলের জন্য আরও ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা জমা করেছেন।
তার বিরুদ্ধে তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে কাজী রেজাউল করিম বলেন, সিঙ্গাপুরে পুণ্য গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড প্রাইভেট লিমিটেড ও পুণ্য সুপার মার্কেট প্রাইভেট লিমিটেডে নানাধরনের এক্সেসরিজ কেনার জন্য কর্মাস ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার সিঙ্গাপুর নিয়ে যান। পরে ওই ডলার সমূহ প্রয়োজন না হওয়ায় সিঙ্গাপুরের দুটি আলাদা একাউন্ট থেকে কমার্স ব্যাংকের একই একাউন্টে ফেরত দেন।
ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ব্যবসার কাজে লাগানোর জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেই টাকা পরে প্রয়োজন না হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন শাহজাহান বাবলু।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ২০০ কোটি ও ১৯০ কোটি টাকা অডি ঋণের বিষয়টি অসত্য দাবি করে শাহজাহান বাবলু বলেন, মূলত স্থিতি ঋণ আছে ১৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় জমা করেছি। কমার্স ব্যাংক থেকে নেওয়া ১৬৫ কোটি টাকা থেকে কমার্স ব্যাংক দিলকুশা, কৃষি ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস ঢাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হেড অফিস কমপ্লেক্স ব্রাঞ্চ, ইউসিবিএল ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চ ও প্রিমিয়ার ব্যাংক দিলকুশা কর্পোরেট ব্রাঞ্চে মোট ১০২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছি। অবশিষ্ট টাকায় ফার্টিলাইজার আমদানি করেছি এবং বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাজে ব্যবহার করেছি।
শাহজাহান বাবলু আরও বলেন, আমি জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সদস্য হয়ে বৈধভাবে বিদেশে এসেছি। বিদেশে অবস্থানকালে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ব্যবসা গড়ে তুলেছি। এখানে ব্যবসা পরিচালনা বা বাড়ি-গাড়ি করলে সেটা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আমার মত হাজারও প্রবাসী উপার্জন করে প্রবাসে বাড়ি-গাড়ি করছেন।
Discussion about this post