দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। ১৯৪৯ সালে জন্ম নেওয়া শেখ মোহাম্মদ আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দুবাই পুলিশের প্রধানের পদে ছিলেন। শেখ রাশেদ বিন সাইদ আল মাকতুমের তৃতীয় পুত্র তিনি। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা আমিরাতের ভাইস-প্রেসিডেন্টও এই শেখ মোহাম্মদ, সঙ্গে দুবাইয়ের শাসকও তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ ধনকুবের এই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক উঠে এসেছে তার নিজের লেখা ‘কিস্সাতি’ (আমার গল্প) বইটিতে।
পঞ্চাশ পর্বে সে গ্রন্থ থেকেই নানা দিক তুলে এনেছেন মুহাম্মাদ শোয়াইব। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
আমার বাবা শেখ রাশেদ দুবাইয়ের ক্ষমতা গ্রহণের পরে, আমার প্রথম বিদেশ সফর শুরু হয় তার সঙ্গে। আমি বাবার সঙ্গে ইরানের শেষ রাজা মোহাম্মদ রেজা পাহলভির দরবারে যাই। ইরান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ও পাহলভি পরিবারের শেষ সম্রাট ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামিক বিপ্লবের ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
আমার বয়স তখন ১১ বছর। আমি তখন রাজাদের ভাবগাম্ভীর্যের অনেক কিছুই বুঝতাম না। রাজারা নিজেদের জনগণ থেকে দূরে রাখতেন। আমিও তাদের দূরেরই মনে করতাম।
পারস্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ২,৫০০তম বার্ষিকী উদযাপনে ১৯৭১ সালে ইরানের রাজা নিজে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। আমি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত আমি রাজাদের অনেক বিষয় জানতামই না। প্রায় ১০০ মিলিয়ন খরচ করা হয় ওই অনুষ্ঠানের জন্য, ওই সময়ের জন্য এটা বিশাল পরিমাণ ছিল।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও রাজাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশাল একটি বাগানে ১৬০ একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হয় ৫৯টি তাঁবু। মাঝখানে ছিল তিনটি বিশাল রাজকীয় তাঁবু; যা এই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। সেরা রাঁধুনিরা আমাদের জন্য রান্না করেছিলেন। পুরো আয়োজনে আলাদা মাত্রা আনতে হাজারো সৈন্যকে ঐতিহাসিক পারস্য পোশাক পরানো হয়। আমি অনুষ্ঠানটি উপভোগ করি। অতিথিদের সম্পর্কে জানতে পেরে বেশ মুগ্ধ হই।
অল্প বয়সে দেখা বিশাল ওই অনুষ্ঠানটি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক উপলব্ধির সুযোগ এনে দেয়। এমন কিছু শিক্ষা আমি অর্জন করি যা সারা জীবন মনে থাকবে। সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি হলো, দু’দেশের শাসন-পদ্ধতির পার্থক্য। কিভাবে ইরানের শাহ তার দেশ পরিচালনা করতেন, আর আমরা কিভাবে আমাদের দেশ পরিচালনা করি- আমি তার তুলনা করি। যদিও দুটি দেশের আয়তনে রয়েছে বড় ধরনের ব্যবধান।






















