তাসনীম আহসানের জীবনের শেষ হৃদয়ছোঁয়া স্ট্যাটাস : সামাজিক মাধ্যমে শোকের ছায়া
“আমার অসুস্থতা ‘ক্যারিয়ারের’ সবচেয়ে ক্রিটিকাল মুহুর্ত পার করছি। পার্শিয়াল প্যারালাইসিস। বাম দিক বাতিল। বাম পা, বাম হাত। হাঁটা-চলা, পানি খাওয়া, সব বাতিল।
আমার স্ত্রী আর বোনের কাঁধে ভর দিয়ে পা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে এক খান থেকে আরেক খানে যেতে হয়। শোল্ডার জয়েন্টে এমন পেইন হয় যে, মরফিন ছাড়া কোন ঔষধ কাজ করে না। তাই বাহক হিসেবে হুইলচেয়ারকে বেছে নিলাম। বেছে নিতে বাধ্য হলাম বলতে পারেন। মৃত্যুর আগ মূহুর্তে পর্যন্ত এটা খুব সম্ভবত আমার সঙ্গী হয়ে থাকবে।
আমি চাই এই অসুস্থতার বিনিময়ে আল্লাহ যেন আমার সমস্ত গুণাহ কাটায়ে দেন। তাহলেই আমার চেয়ে সুখী আর কেউ হবে না। কেউ না। আমার মনটা প্রচণ্ড অস্থির হয়ে আছে। একটু দুয়া করে দিয়েন তো।
বিঃদ্রঃ হুইলচেয়ার থেকে পৃথিবীকে বড় অন্যরকম দেখায়। আফসোস, আপনারা অনেকেই সেটা জানেন না। সব জিনিস না জানাই বোধহয় ভাল। তাই না? আপনাদের জন্য ভালবাসা।”
তাসনীম আহসানের স্ত্রী তমা আলমের স্ট্যাটাস,
“আমার স্বামী Tasneem Ahsan আজ ফজরের ওয়াক্তে আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেসে। আপনাদের সকলের কাছে ওর মাগফিরাত কামনা করে দু’আর আবেদন করছি।
আসসালামু আলাইকুম,
আমি তাসনিমের স্ত্রী তমা লিখছি এই প্রোফাইল থেকে।
আপানারা অনেকেই হয়ত জানেন গত ১ মাস যাবত তাসনিম ভীষন অসুস্থ। তাসনিমের লাস্ট পোস্টে ও বলেছিল সে চলাফেরা করতে পারছে না তাই হুইলচেয়ারের সাহায্য নিতে হচ্ছে। কিন্তু তার ২-৩ দিনের ভিতর ওর নড়াচড়ার ক্ষমতা আরো কমে যায়।
তাই ওর হেমাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ওকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করি ডাঃ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ স্যার কে দেখানোর জন্য। টেলিমেডিসিনে দেখে কিছু বোঝা না যাওয়ায় উনি নিউরোসাইন্স ইন্সটিটিউট, আগারগাঁও তে ভর্তি করতে বলেন।
সেখানে ভর্তি করার পর বিভিন্ন টেস্ট করার সিরিয়াল পেতে পেতে ৭-৮ দিন চলে যায়৷ এর মধ্যে হঠাৎ করেই তাসনিমের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় যার ফলে ওকে এইচ.ডি.ইউ তে শিফট করতে হয়। এর মাঝে নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট করে আমাদের জানানো হয় এটা ক্রনিক ভ্যারাইটির জি বি এস। ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিলে ভালো হয়ে যাবার সম্ভবনা আছে। আবার অন্যদিকে ডাক্তাররা এটাও বলেছেন মে বি এটা ড্রাগ ইন্ডিউসড নিউরোপ্যাথি।
ডাক্তারদের মধ্যে দ্বিমত থাকায় বোর্ড গঠন করে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেয়ার পক্ষে মত দিলে ১৪টি করে ৫ দিনে মোট ৭০ টি ডোজ দেয়া হয়। এগুলো দেয়া শেষ হবার পর তাসনিম কোনভাবেই আর হাসপাতালে থাকতে না চাওয়ায় ওকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
বাসায় ওকে শোয়ানোর জন্য হসপিটাল বেড এর প্রয়োজন হচ্ছে। সাথে বেশীরভাগ সময়ই শ্বাসকষ্ট এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন লো হয়ে যাওয়ার জন্য অক্সিজেনও দিতে হচ্ছে। হাত পা নাড়ানো বা যে কোন বডি পার্টস মুভমেন্ট এখনো করতে পারছে না।
আপনারা অসংখ্যবার আমাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন, আমাদের ভালোবেসেছেন। আপনাদের দোয়া এই মুহুর্তে আমাদের খুব প্রয়োজন। ইনশাআল্লাহ তাসনিম খুব দ্রুতই উঠে বসবে, আবারো আপনাদের জন্য লিখবে৷ আমি আশা ছাড়িনি৷
আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন।”
Discussion about this post