আমিরাতে জুমা’র খোৎবা: সামর্থবান ব্যক্তির জন্য হজ্ব বাঞ্ছনীয়

শুরুতে প্রশংসা
সীমাহীন প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর বান্দাদের ইবাদতের দ্বার খুলে দিয়েছেন এবং তাঁর নৈকট্য লাভের পথ সুগম করেছেন।
অসীম দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর উপর, তাঁর পরিবার, সাহাবাগণ এবং অনুসারী তাবেঈনের উপর।

হজের প্রতি হৃদয়ের আহ্বান
প্রিয় মুসল্লীগণ,
আমরা এমন একটি বরকতময় সময় অতিক্রম করছি, যেখানে আমাদের হৃদয় মক্কার দিকে আকৃষ্ট। এটি ইব্রাহীম (আঃ)-এর সেই ঐশী আহ্বানের প্রতিফলন।
মহান আল্লাহ বলেন:

“মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা দাও।”
— সূরা আল-হজ্ব: ২৭

“যার সামর্থ্য আছে, তার উপর হজ্ব ফরজ।”
— সূরা আলে ইমরান: ৯৭

এখান থেকে স্পষ্ট যে, শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ।

সদিচ্ছার মর্যাদা
যারা শারীরিক বা আর্থিকভাবে অপারগ, অথচ অন্তরে হজ্বের জন্য আগ্রহ ও সদিচ্ছা রাখেন, তারাও মহান প্রতিদান পাবেন।
রাসূল ﷺ বলেন:

“মদীনায় কিছু দুর্বল মানুষ রয়েছে, যারা সর্বদা তোমাদের সঙ্গেই থাকে, যদিও দুর্বলতার কারণে তোমাদের সঙ্গে যেতে পারে না।”
— সহীহ বুখারী: ২৮৩৯

ফরজ ও নফল হজ্ব
যে ব্যক্তি জীবনে একবার হজ্ব করেছে, সে তার ফরজ দায়িত্ব পালন করেছে। এরপর হজ্ব করলে তা হবে নফল।
রাসূল ﷺ বলেন:

“জীবনে একবার হজ্ব ফরজ। এর বেশি নফল।”
— সহীহ বুখারী: ৭২৮৮, সহীহ মুসলিম: ১৩৩৭

নফল হজ্বের বিকল্প উত্তম কাজ
ইসলামী স্কলারগণ বারবার নফল হজ্বের পরিবর্তে দান ও মানবসেবার গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইমাম হাসান বসরী (রহঃ) বলেন:
“তুমি ফরজ হজ্ব করে ফেলেছো, এখন আত্মীয়-স্বজন, গরীব প্রতিবেশী ও দুঃখী মানুষকে সাহায্য করো। এটাই উত্তম।”
— আল-যুহদ, ইমাম আহমদ: ১৪৮৮

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন:
“সাদাকাহ করা নফল হজ্ব অপেক্ষা উত্তম।”
— البحر المحيط: ১/১৩১

ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহঃ) বলেন:
“নফল হজ্বের অর্থ দিয়ে ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো অধিক উত্তম।”
— الفروع و تصحيح الفروع: ৪/৩৮৬

হজের বিকল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল

• ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকির, এরপর ২ রাকাত নফল নামাজ—এতে পূর্ণ হজ্ব ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়।
  — সহীহুল জামে: ৬৩৪৬

• জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন পৃথিবীর সর্বোত্তম দিন।
  — সহীহ বুখারী: ৯৬৯

• আরাফার রোজা বিগত ও আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
  — সহীহ মুসলিম: ১১৬২

• আরাফার দিনের দোয়া সর্বোত্তম দোয়া।
  — তিরমিযী: ৩৫৮৫

• কুরবানীর দিন হলো পানাহার ও আল্লাহর স্মরণ করার দিন।
  — আবু দাউদ: ২৪১৯

হজের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
“হজের সময় অশ্লীলতা, পাপ কাজ ও ঝগড়া করা যাবে না।”
— সূরা আল-বাকারা: ১৯৭

“তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো, আর সর্বোত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া।”
— সূরা আল-বাকারা: ১৯৭

সমাপনী দোয়া
হজযাত্রীদের জন্য ও তাদের সাহায্যকারীদের জন্য দোয়া করুন।
ইয়া আল্লাহ!

• সকল হাজ্বীদের হজ্ব কবুল করুন।

• যাদের উপর হজ্ব ফরজ হয়েছে, তাদের জন্য হজ্ব সহজ করুন।

• আমাদের সবাইকে একবার হজ্ব করার তাওফিক দিন।

• আমাদের পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।

আমিন।

প্রণেতা:
MQM Saifullah Mehruzzaman
খতীব, Sustainable City Camp
Sharjah, UAE