‘প্রবাসে আসার কয়েক মাস পর খেয়াল করি সঙ্গে আনা জামা-প্যান্টগুলো ঢিলেঢালা হয়ে যাচ্ছে। ৮০ কেজির দেহটার ওজন ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। গোলগাল চেহারায় ভাঙন ধরেছে। ঋণের চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না, ক্যাটারিং-এর খাবারও গলা দিয়ে নামতে চায় না।’ হৃদয়-বিদারক কথাগুলো বলছিলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী সুমন সিকদার।
তিনি বলেন, খেয়ে, না খেয়ে, ব্যাংকের লোন আর আত্মীয়দের ধারের টাকা দিতে মরিয়া হয়ে খেটে যাচ্ছি। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে, শান্তনা দেয়ার মতো মানুষটিও আজ আর নেই। অসংখ্য রাত কাটে নির্ঘুম। এক রকম অর্ধহারে-অনাহারে কাটে দিনগুলি। পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হলে সবাই বলে, কিরে একি হাল করেছিস চেহারার।
‘বহু স্বপ্নের প্রবাস জীবন। কত কষ্টই না করেছি প্রবাসী হওয়ার জন্য। নানা মানুষের কাছে দৌড়াদৌড়িও করেছি। আজ যেন কাটা গলায় বিঁধে পড়েছে। না পারছি গিলতে, না পারছে বের করতে। জীবনের প্রতি গভীর অভিমান নিয়ে কাটে প্রতিটি মিনিট। অনেক কিছু কেনার আশা নিয়ে শপিয়ে যায়। ডরমেটরিতে ফিরে আসি ১ ডলারের কোল্ডড্রিংস খেতে খেতে।’
সাধ্যের অধিক ঋণের বোঝা কেড়ে নিয়েছে আমার হাসি, মনের শান্তি আর রাতের ঘুম। পৃথিবীর সব ভুলে এখন একটাই চাওয়া, কবে ঋণ শোধ হবে। কবে পারব বুকভরা নিঃশ্বাস নিতে। কবে ফিরবে শান্তির ঘুম, বিশ্বজয়ের হাসি।
‘হয়তো একদিন ঋণ শোধ হবে। দূর হবে ঘরের অভাবও কিন্তু প্রথম প্রবাসের অর্থ কষ্ট আর খাদ্যের কথা কোনোদিন হয়তোবা ভুলতে পারব না। নামমাত্র হাত খরচে সারা মাস পার করি, মার্কেটে সাজিয়ে রাখা ফল আর খাবার দেখে খেতে ইচ্ছে করলেও পারি না।’
করোনা আতংকিত হয়ে কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে বহু মানুষের। এরপরও এনজিওগুলো আমাদের কোনও সাহায্য সহযোগিতা না করে উল্টো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। করোনাকালে কিস্তির চাপে দিশেহারা মানুষের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর অনুরোধ রইলো।
দেশের এই সংকটের সময়ে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন বন্ধ করা হোক। তা না হলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিপদে পড়বে। সফল হোক প্রবাসে থাকা সবার জীবন, খুব বেশি ভালো কাটুক তাদের প্রতিটি দিন।
Discussion about this post