সরকারের শক্তিশালী সহায়তা কার্যক্রমের ওপর ভর করে করোনার প্রভাবে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা পেয়েছে বেশকিছু বিমান পরিবহন সংস্থা। কিন্তু খাতটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী মাসগুলোয় ‘ব্যর্থ’ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক এয়ারলাইনস। ভ্রমণ উপাত্তবিষয়ক কোম্পানি সিরিয়াম জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এরই মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে ৪৩টি বাণিজ্যিক বিমান পরিবহন সংস্থা। ২০১৯ সালের পুরো বছরে এ সংখ্যা ছিল ৪৬টি এবং ২০১৮ সালে ৫৬টি। সিরিয়ামের সংজ্ঞা অনুযায়ী সেসব এয়ারলাইনসকেই ব্যর্থ বলা হচ্ছে, যেগুলো তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। খবর সিএনবিসি।
সোবি এভিয়েশনের স্বাধীন বিশ্লেষক ব্রেন্ডান সোবি বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারীর প্রেক্ষাপটে সরকারি সহায়তা ছাড়া চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা এয়ারলাইনসের গণ-দেউলিয়াত্ব দেখা যেত। কিন্তু সরকারগুলোর তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপের ফলে এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। কারণ উদ্ভূত সংকটের তুলনায় ব্যর্থ বিমান পরিবহন সংস্থার সংখ্যা খুব বেশি নয়। সোবি বলেন, মহামারীর আগে থেকেই বহু এয়ারলাইনস সংকটের মধ্যে ছিল। কিন্তু সত্যি বলতে, টিকে থাকার ক্ষেত্রে এখন তাদের সামনে ভালো সুযোগ রয়েছে। আর এর মূলে রয়েছে সরকারের সহায়তা পদক্ষেপ।
অন্যদিকে সিরিয়ামের বৈশ্বিক প্রধান রব মরিস বলেন, চলমান সংকটের মধ্যে আশার আলো বলে যদি কিছু থাকে, সেটি হলো এ মুহূর্তে সরকারের সহায়তা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে মরিসের মতে, আর্থিক সহায়তার পরও ২০২০ সালের বাকি মাসগুলো বিমান পরিবহন খাতের জন্য খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক হবে না। কারণ বহু এয়ারলাইনস বছরের শেষ কয়েক মাসে এসেই ব্যর্থ হয়। এক ই-মেইল বার্তায় তিনি সিএনবিসিকে জানান, যেকোনো এয়ারলাইনসের জন্য সাধারণত প্রথম ও চতুর্থ প্রান্তিক সবচেয়ে কঠিন হয়, কারণ বছরে তাদের আয়ের অধিকাংশই আসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে। তবে তার পরও এ বছর গণ-দেউলিয়াত্বের প্রত্যাশা করছেন না মরিস।
তিনি বলেন, আমার মতে, এয়ারলাইনসগুলোকে শীত মৌসুমে টিকে থাকার জন্য গ্রীষ্মেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত যেকোনো মূল্যে টিকে থাকা। হয়তো ২০২১ সালের গ্রীষ্মে তারা কোনো সমাধান খুঁজে পাবে এবং একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াবে উচ্চ চাহিদা। কিন্তু সমস্যা হলো, চলতি বছর এখনো বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে এয়ারলাইনসগুলো চাহিদা সংকটে ভুগছে। ফলে তাদের আয়ও থমকে আছে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের শেষ ও ২০২১ সালের অন্তত প্রথম প্রান্তিকে আরো বেশকিছু বিমান পরিবহন সংস্থাকে ব্যর্থ হতে দেখব।
মরিসের এ পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্রেন্ডান সোবিও। তার মতে, অনেক সরকারই হয়তো দ্বিতীয়বার এয়ারলাইনসগুলোকে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষায় ইচ্ছুক না-ও হতে পারে। তবে তার পরও তিনিও গণ-দেউলিয়াত্বের আশা করছেন না।
সিরিয়ামের উপাত্ত অনুযায়ী, এবারের সংকটে বড় এয়ারলাইনসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত ৪৩টি ব্যর্থ এয়ারলাইনসের মধ্যে ২০টির অন্তত ১০টি করে উড়োজাহাজ রয়েছে। ২০১৯ সালের পুরো সময়ে ১০ বা ততোধিক উড়োজাহাজ রয়েছে এমন ব্যর্থ এয়ারলাইনসের সংখ্যা ছিল ১২টি। আর ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০টি। এ বিষয়ে মরিস বলেন, ২০২০ সালে এখন পর্যন্ত আমরা এয়ারলাইনস ব্যর্থ হওয়ার সংখ্যা কম দেখলেও এগুলোর মধ্যে ১০টির বেশি উড়োজাহাজ রয়েছে এমন বিমান পরিবহন সংস্থার সংখ্যা গত ছয় পূর্ণ বছরের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে হলো, বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস বৃহৎ বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে এবং সেগুলোকে ব্যর্থ করছে। সব মিলিয়ে এ বছর ফ্লাইট পরিচালনা করছে না এমন উড়োজাহাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ারলাইনস ব্যর্থ হওয়ায় এখন পর্যন্ত অলস পড়ে আছে ৪৮৫টির মতো উড়োজাহাজ। ২০১৯ ও ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৩১ ও ৪০৬।
Discussion about this post