বিদেশ থেকে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদেরও দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত ৬ মাসে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১৭ হাজারেরও বেশি নারী শ্রমিক ফেরত এসেছেন।
এ দিকে সৌদি আরব পাড়ি জমানো নারী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী বা তাদের সন্তানদের হাতে নানা অজুহাতে নির্যাতিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে পাড়ি জমানো নদী আক্তার নামে এক তরুণীর গৃহকর্তার বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত ২১ আগস্ট তরুণীর মৃত্যু হলেও তার লাশ এখনো সে দেশের মর্গে পড়ে আছে।
হতভাগ্য তরুণীর লাশ দেশে আনতে নিহতের বাবা মো: দুলাল শেখ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংসস্থান মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অনেক দফতরেই লিখিত আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি তার লাশ দেশে আনার কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। উল্টো প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নদী আক্তারের লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করার অনুমতি চেয়ে নিহতের বাবার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি সেটি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সৌদি আরবের মদিনায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হওয়া নদী আক্তারের বাবা মো: দুলাল শেখ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার মেয়েকে বাংলা মটরের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি (লাইসেন্স নম্বর-২৬৫) থেকে ১৮ মাস আগে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলাম। এর মধ্যে সে ৫ মাসের বেতন আমাদেরকে পাঠিয়েছিল। বাকি টাকা চেয়েও আমার মেয়ে পায়নি। উল্টো মালিক বেতন না দিয়ে তাকে নির্যাতন করত বলে আমাদের জানাত নদী। এরমধ্যে চলতি বছরের আগস্টে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক লালন সাহেব আমাদের টেলিফোন করে জানান, আপনার মেয়ে সৌদি আরবে মারা গেছেন। কিভাবে মারা গেছে- জানতে চাইলে তিনি তার কোনো জবাব দেননি।
তিনি বলেন, মারা যাওয়ার ১১দিন আগেও আমার মেয়ে সুস্থ অবস্থায় টেলিফোনে আমার সাথে কথা বলেছিল। তার দাবি, নদী আক্তারকে গৃহকর্তা বা তার অন্য কেউ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। এ নিয়ে আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি আমার মেয়ের লাশ দেশে আনার কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়েছে কিনা তা আমি জানতে পারিনি। এরমধ্যে গত মাসে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি আসে আমার কাছে। তাতে লেখা আছে ‘আমার মেয়ে নদী আক্তার সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে’। সৌদি আরবেই নদী আক্তারের লাশ দাফন করার জন্য তারা আমার কাছে লিখিত অনুমতিও চেয়েছিল। আমি বলেছি, আমি তো আমার মেয়ের লাশই দেখলাম না। ওই দেশে দাফনের অনুমতি দেবো কিভাবে?
গত ২৭ আগস্ট নদী আক্তারের লাশ দেশে আনতে নিহতের বাবা দুলাল শেখ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, নদী আক্তারের পাসপোর্ট নম্বর-বিওয়াই-০২৪১৪৮১। মা বিউটি বেগম। শিমনগর, মেঘনা কুমিল্লা। সে ২১ আগস্ট মারা গেছে বলে জেনেছি। এখন মদিনার একটি হাসপাতাল মর্গে তার লাশ সংরক্ষিত রয়েছে। তার লাশ স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত ৬ মাসে ফেরত আসা ১৭ হাজার ১৮২ জন নারী শ্রমিকের মধ্যে সৌদি আরব থেকেই এসেছেন ছয় হাজার ২৫ জন। এরপরের অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারপর কাতার ও লেবানন।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়, বিদেশ ফেরত ও আটকেপড়া কর্মীদের সহযোগিতা প্রদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব কর্মী নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
Discussion about this post