বৈশ্বিক মহামারি করোনায় দীর্ঘ আট মাস শুয়ে-বসে দিন পার করছেন দুবাইয়ের কার্গো ব্যবসায়ীরা। আকাশ ও নৌ পথে নিয়মিত যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে এই সেক্টরে। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বকেয়া পড়ে গেছে শ্রমিকের বেতন। কোনও কোনও মালিক পক্ষ ব্যবসায়িক মন্দার অজুহাতে ছুটি দিয়েছে শ্রমিকদের। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে কিছু কিছু কার্গো প্রতিষ্ঠান আবার কাজ শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু দুবাইয়ের পুরাতন বাজার দেরাতে তিনশতাধিক কার্গো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫ জন কর্মচারী কাজ করে, যাদের অধিকাংশই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। করোনার প্রভাবে ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্গো ব্যবসা বন্ধ থাকায় সেখানকার দেড়-দুই হাজার প্রবাসীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু দেরা দুবাই নয়, এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, শারজা, আজমান, ফুজাইরাহ, রাস আল খাইমা, উম্ম আল কোয়েনসহ বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসরত কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, আকাশ ও নৌ পথে কার্গো পরিবহন এখন শূন্যের কোটায়। দেশে পাঠানোর জন্য বিভিন্ন কার্গো প্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের মালামাল জমা করলেও সেগুলো পড়ে আছে লম্বা সময় ধরে। কেউ কেউ মালামাল ফেরত নিলেও অধিকাংশই পড়ে আছে কার্গো অফিসগুলোতে।
লাখ লাখ টাকার এসব মালামাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কার্গো ব্যবসায়ীরা। কষ্টার্জিত অর্থে কেনা এসব মালামাল নিয়ে প্রবাসীরাও রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।
দুবাইয়ের কার্গো ব্যবসায়ী মিটু রঞ্জন পাল বলেন, লকডাউন শিথিলের পর ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে কার্গো মালামাল পাঠানো গেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশিরা। আটমাস কার্গো পরিষেবা বন্ধই ছিল। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে কিছু কিছু মালামাল যাচ্ছে।
রেঞ্জার্স কার্গোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসান অভিযোগ করেন, করোনার শুরু থেকে কার্গো ব্যবসায়ীরা অসহায়। করোনার সময় যেসব মাল দেশে গেছে সেগুলোও কাস্টমসে আটকে আছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান স্টাফদের বেতন বন্ধ রেখেছে। এতে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেরা দুবাইয়ের ফ্রেন্ডশিপ কার্গোর স্বত্বাধিকারী আলী আজগর বলেন, প্রায় ১৩ বছর কার্গো ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সেক্টরে থাকা সবার পক্ষে অসম্ভব। কার্গো পরিবহন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেকের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। দু’দেশের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে যদি কার্গো পরিবহন দ্রুত শুরু করা যায় তাহলে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে কেনা পণ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা কমে আসবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা দাবি করে আসছি। কেননা, ছোটখাট সমস্যার কারণে মাসের পর মাস কাস্টমসে মালামাল পড়ে থাকে। চালান বন্ধ হয়ে যায়। দেশে এই সমস্যা সৃষ্টি হলেও প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উল্টো মামলা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়।
কামরুল হাসান জনি,
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউ এ ই।
Discussion about this post