এনামুল হক: মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি বলেছিলেন “আমি সিলেটের মাটি দেখে মরতে চাই” । জীবনের শেষ জুম্মার নামাজ বন্দর বাজার মসজিদে আদায় করে সাইফুর রহমান বলেছিলেন, “সিলেট আসলে আমি লাঠি ছাড়া হাটতে পারি আর মৌলভী বাজার গেলে আমাকে লাঠি নিয়ে হাঠতে হয়”। তিনি বলেছিলেন, “যত দিন বেচে থাকব সিলেটকে নিয়েই বাচতে চাই-সিলেটই আমার শেষ ঠিকানা”।
আজ ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট তথা বাংলাদেশের জন্য একটি বেদনার দিন । ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মায়াময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান উন্নয়নের বরপুত্র সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ”সিলেট বন্ধু” এম. সাইফুর রহমান ।
যাকে আজও খোঁজে বেড়ান বৃহত্তর সিলেটের মানুষ । সুনামগঞ্জের ভাটির জনপদ সেই তাহিরপুর ধর্মপাশা থেকে হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জ পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ খোঁজে বেড়ান তাদের প্রিয় নেতাকে । সিলেটের উন্নয়নে সাইফুর রহমান ছিলেন এক আপোষহীন পুরুষ। একনেক থেকে শুরু করে কেবিনেটেও ছিলেন স্টেইট কাট। “এই কাজ এ ভাবে হবে, হওয়া উচিৎ-অনুমোদন সমর্থন দিলে দেও না দিলে নাই , ”সব ছেড়ে ছুড়ে মৌলভী বাজার গিয়া বরী বাইমু” সিলেটের উন্নয়ন প্রশ্নে এমন কথা হর হামেশাই বলতেন তিনি ।
প্রায় প্রোগ্রামেই তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে বলতেন, ”যা চাইবার চাইলাও,আর আমিও যা দিবার দিলাইয়ার”. একনেক থকে কেবিনেট আর সংসদ যেখানেই যে প্রকল্প পাশ হোক ঐ সংশ্লষ্ট সিলেটের একটি প্রজক্টে থাকতেই হবে । এটিই ছিল তাঁর রাজনীতির সংগ্রাম । সিলেট শহর তথা সিলেট বিভাগের যে দিকে তাকাই সে দিকেই দেখি সাইফুর রহমানের স্মৃতি বিজড়ীত ঐতিহাসিক উন্নয়নের বাস্তব নমুনা।
মরহুম স্পীকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, মরহুম অর্থ মন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরীয়া. মরহুম পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যু সিলেটবাসীকে অভিভাবক শূন্য করে দিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের মাঝে স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থাকবেন এম. সাইফুর রহমান।
তখন তিনি অর্থমন্ত্রী । সরকারি সফরে এসেছেন সিলেটে । সার্কিট হাউসে দুপুরের খাবারের মেনুতে যুক্ত করা হলো ছোট মাছের সাথে সাতকরা। খুব মজাদার তরকারি দিয়ে অর্থমন্ত্রী খেয়ে সার্ভিস ম্যনকে বললেন “ওবা হাতখরা রাইত খাইমু রাখিও। জি স্যার বলে বেচারা চলে গেল। কিন্তু ভুলে সেটা বাবুর্চিকে বলতে ভুলে গেল। রাতের খাবারের টেবিলে বসলেন অর্থমন্ত্রী । টেবিলে সকল তরকারি আসে সাতকরা আর আসেনা। তিনি ডেকে বললেন “ওবা আমার হাতখরা কোয়াই”?
সার্ভিস ম্যান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো স্যার মনে নাই আমরা খাইলিছি। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বললেন “ইয়া সারা সিলেট খাইতে খাইতে আমার হাতখরাও তোমরা খাইলিলায় নিবে”? হা হা হা বলে উপস্থিত সবাই হেসে উঠলেন ।
বতর্মান সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানের সময় জনৈক একজন বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমানকে বললেন, স্যার এই টিলার মাঝখানে জঙ্গল আর অন্ধকারের মাঝে কেন এত টাকা খরচ করে স্টেডিয়াম করছেন। তখন তিনি ঐ নেতার ঘাড়ে হাত রেখে বলেছিলেন, “শুন আমি একদিন থাকবোনা এই স্টেডিয়ামে একদিন হয় তো বিশ্বকাপ হবে তখন আমার কথা মনে হবে।
সেই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ হয়, এশিয়ার অন্যতম নান্দনিক স্টেডিয়াম ও হয়েছে এটি। এম সাইফুর রহমানের স্বপ্নের সেই স্টেডিয়ামে রুপান্তর করার জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার মতে এই স্টেডিয়ামের একটি গ্যালারী এম সাইফুর রহমানের নামে নাম করন করাটাই হবে যথার্থ।
এম সাইফুর রহমান কোন দলের নয়। নি:সন্দেহে তিনি সিলেটের সিলেটবাসীর প্রিয়জন। শতাব্দীতে সাইফুর রহমানরা একজনই জন্ম নেন। শুধু সিলেট নয় বাংলাদেশের উন্নয়নে এম সাইফুর রহমানের অবদান অবিস্মরনীয়। আজ বাংলাদেশ যে উন্নয়নে মহা সড়কে হাটছে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল এম সাইফুর রহমানের হাত ধরেই। আজ যে ভ্যাট ট্যক্সের উপর দাড়িয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে সেই ভ্যাট ট্যক্সের প্রবক্তা এম সাইফুর রহমান। আজকের যুব উন্নয়ন, গবাদি পশু পালন, দুগ্ধ খামার, পোল্ট্রি শিল্প তৈরির কারিগর এম সাইফুর রহমান। বাংলাদেশের তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ অর্থনীতির পথে হাটা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই।
সিলেট বন্ধু এম সাইফুর রহমান। তুমি সিলেট প্রেমিক, তুমি উন্নয়নের মহা কারিগর। তুমি চির অম্লান তুমি চির ভাস্মর।
লেখক- সাংবাদিক
Discussion about this post