কামরুল হাসান জনি:
অনেক ক্ষেত্রেই প্রবাসীদের মুরগী মনে করেন দেশের বিশেষ কেউ কেউ। এটি নতুন বিষয় নয়। অহেতুক নানা ধরণের কাজে ব্যাপক উৎসাহের পেছনে অর্থ হাতিয়ে নেয়া কিংবা প্রতারণার জালে ফাঁসানো উদ্দেশ্য থাকে কারো কারো। এটিও নতুন কিছু নয়। শব্দ বা বাক্য ঠিক থাকুক আর না থাকুক, বানান ভুল হোক শত কিংবা হাজার, তবুও কবি-লেখক আখ্যা দিয়ে প্রতিবছর বই মেলায় মুরগীর মত জবাই হন বেশ কিছু প্রবাসী। দীর্ঘদিন ধরে এমনটি চলে আসছে। এটি শুধু সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে মুরগী হবার একটি নমুনা দিলাম। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত হাজার সমস্যা সামনে দাঁড় করে সহানুভূতির কৌশলে প্রবাসীদের মুরগী বানান অনেকে।
আমিরাতস্থ বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের দায়িত্ব থাকায় এখানকার সংবাদকর্মীদের ভাল-মন্দ অনেক খবরই রাখতে হয়। স্ব স্ব মিডিয়ার অবস্থা সম্পর্কেও তারা জানান মাঝে মাঝে। পুরাতনরা ভাল চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তুলনামূলকভাবে নতুনরা অত্যন্ত ভাল করছেন এখন। যা একজন সংবাদকর্মী হিসেবে স্পষ্ট দেখছি। নতুনরা যেমন পেশাদার হতে চেষ্টা করছেন তেমনি তেলবাজি, ফটোবাজি থেকেও দূরে থাকছেন। তাদের প্রতিবেদনগুলো ভাল হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজি কিংবা অর্থের বিনিময়ে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগও এদের বিরুদ্ধে নেই বললে চলে। এভাবে চলতে থাকলে নতুনরা একদিন সুস্থ সাংবাদিকতার মশাল হাতেই অগ্রভাগে দাঁড়াবে কমিউনিটিতে, এটাই বিশ্বাস। ঘটনা এখানে নয় ! ঘটনা হচ্ছে নতুনরা কাজের ক্ষেত্রে কতটুকু উৎসাহ পাচ্ছে, এটাই বড় কথা। মূলত দেখার বিষয় হচ্ছে- কমিউনিটি তাদের কাজের ক্ষেত্রে কতটুকুই সহযোগিতা করছে, তারা কতটুকু সঠিক পন্থায় স্ব স্ব মিডিয়া অফিসের সাপোর্ট পাচ্ছে!
যতদূর খবর পেয়েছি, প্রবাসী সংবাদকর্মীদের বেশিভাগই বিনা বেতনে শ্রম দিচ্ছেন এই জগতে। এভাবে কিন্তু নিজেদের সৃজনশীল মানসিকতা দীর্ঘদিন ধরে রাখা মুশকিল। গত একমাসে পরপর দুটো অভিযোগ পেয়ে আরো বেশি হতাশ হলাম। চিন্তা করছি নতুনদের নিয়ে। তারা আদৌ কি ধরে রাখতে পারবে এই সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ! আমিরাতের উদীয়মান এক সংবাদকর্মী ঢাকার একটি মিডিয়ায় কাজ করতে যোগাযোগ করেন। মিডিয়াটি সাধারণ বিবেচনায় তৃতীয় সারির ধরা যায়। নিজেরা স্যাটেলাইট চ্যানেল হিসেবে গাল-গল্প করলেও তাদের দর্শক কিন্তু শূন্যের কোটায় ! ওই সংবাদকর্মী কথায় কথায় জানায়, প্রথম দিকে আগ্রহ দেখানো সেই মিডিয়া অফিসের বড়কর্তা তার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেন শুধুমাত্র নিয়োগ দিবেন বলেই। মুখ ফিরিয়ে নেয় ওই ভাইটি। তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে একটি নেতিবাচক ধারণা। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার কাজ যতদিন দেখার সুযোগ হয়েছে ততদিনের মূল্যায়নে বললেও প্রশংসানীয় লেখার হাত বলতে হবে তার। কথিত ওই স্যাটেলাইট টিভির লাখ টাকার জামানত রাখার প্রস্তাব পেয়ে সাংবাদিকতাই ছাড়তে বসেছেন সেই সংবাদকর্মী।
এই যাক কথিত টিভির কথা। সম্প্রতি আরেক সংবাদকর্মী জানালেন একই রকম অভিযোগ। তবে তার অভিযোগ পত্রিকার বিরুদ্ধে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা প্রতিনিধি নিয়োগ দিবেন বলে তাকে উৎসাহ দিলেন। পরে তাকে জানানো হয়, নিয়োগ এবং কার্ডের জন্য দেশে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ পাঠাতে হবে। কথা প্রসঙ্গে তার অভিযোগটিও জানতে পারি। ওই মিডিয়ায় যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বলি তাকে।
এই দুটো অভিযোগ সাধারণভাবে নেয়ার মত নয়। কারণ, ওই সমস্ত অফিসের কর্তৃপক্ষ হয়ত ভাবছেন এরা প্রবাসে থাকে। টাকার কথা বললেই দিয়ে দিবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এটিও মাথায় রাখা উচিত প্রবাসীকর্মীরা এখন ভাল-মন্দ যাচাই করেন। তাদের বোকা ভাবার দিন শেষ হয়ে এসেছে। যতটুকু জানি, নিজের যোগ্যতার পাশাপাশি পারফর্মেন্স ভাল হলে মিডিয়া কর্তৃপক্ষ এমনিতেই নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে সংশয়ের বিষয় হচ্ছে- সরকার অনলাইন মিডিয়া নিবন্ধনের অনুমতি দেয়ার পর এমন সব মিডিয়ার নাম সামনে আসছে যেগুলো বাস্তবিক পক্ষে কোন ক্যাটাগরির তাও ধারণা করা যাচ্ছে না। মূলত, এদের মধ্যে কেউ কেউ কর্মী নিয়োগের নামে ব্যবসায়িক ধান্দায় বসে থাকেন, এটাই প্রমাণ মিলছে। যেকারণে নতুনদের সজাগ সচেতন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রবাসীকর্মীদের গণমাধ্যমে চর্চার পাশাপাশি তাই চোখ-কান খোলা রাখাটা অতি জরুরি।
লেখক : সংবাদ কর্মী, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
Discussion about this post