করোনার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের বিপুল শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে গ্রামে ও শহরের উভয় এলাকায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম ২৫ হাজারের বেশি কিন্ডার গার্টেন। বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের কাছে আসা এমন তথ্যের ভিত্তিতে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেকোনো সময়ে যেকোনো ক্লাসেই বিনা টিসিতে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গত রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা জারি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্র্যাকের ‘এডুকেশন প্রোগ্রাম’-এর আওতায় পরিচালিত এক জরিপেও দেখানো হয়েছে করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাবা-মায়ের সাথে গ্রামে চলে যাচ্ছে। ফলে গ্রামের স্কুলে শিক্ষার্থীদের চাপ বাড়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে সংস্থাটি এমনও আশঙ্কা করছে, করোনার পর অভাবের তাড়নায় অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া বাদও দেবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব পর্যায়েই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় শহর ছেড়ে গ্রামে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী দিনে গ্রামের স্কুলগুলোতে ক্লাসরুম তথা ভবন বাড়াতেও ব্র্যাকের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অভিভাবকের চাকরিচ্যুতি কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই এখনো গ্রামেই অবস্থান করছেন। কয়েক দফায় ছুটি বাড়ানোর ফলে ৩১ আগস্টের আগে স্কুল খোলারও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, স্কুল খোলার পর গ্রামের স্কুলগুলোতে চাপ বাড়বে শিক্ষার্থীদের।
অন্য দিকে ভাড়াবাড়িতে স্কুল প্রতিষ্ঠার কারণে করোনায় অনেক কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্ডার গার্টেন মালিকদের পক্ষ থেকেও এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। অনেকে প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন দিতে না পেরে স্কুল বিক্রিও করে দিয়েছেন।
কিন্ডার গার্টেনের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় দেশের ৪০ হাজারের বেশি কিন্ডার গার্টেনের মধ্যে ৬০ ভাগ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আরো জানান, দেশে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার জানান, করোনার দুর্যোগের সময় শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শিক্ষকদের কষ্ট লাঘব করতে আমরা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ প্রণোদনা চেয়ে আসছি; কিন্তু আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই অনেকে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই এখন পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুনঃভর্তির চেষ্টা করবে।
কিন্ডার গার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, করোনার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক মালিক এখন আর কিন্ডার গার্টেন চালাতে আগ্রহী হবেন না। তাই বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। এ ছাড়া শহরের অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে গিয়ে রি-এডমিশন নেবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শহরের শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের সাথে গ্রামে চলে যাওয়া এবং গ্রামের স্কুলে ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রতন চন্দ্র্র পণ্ডিত জানান, গ্রামের স্কুলগুলোতে ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। তবে তিনি বলেন, গ্রামের স্কুলগুলোতে কিছু অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নতুন করে ভর্তি হলেও তাদের সেখানে স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সময়ে নতুন কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
Discussion about this post