করোনা মহামারীর কারণে সীমিত আকারে চলতে থাকা পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। লকডাউন তুলে নেয়ার পর শুধু পাসপোর্ট নবায়নের কাজ ছাড়া নতুন আবেদন বন্ধ রয়েছে। ফলে পাসপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন লাখো আবেদনকারী।
জানা গেছে, করোনা শুরুর পর থেকে রি-ইস্যু বিশেষ করে হারানো পাসপোর্ট, মেয়াদ শেষ ও ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হলেও পাসপোর্ট তৈরি ও বিতরণে অনেকটা ধীর গতি রয়েছে। এ ছাড়া ই-পাসপোর্ট চালু হলেও করোনার কারণে সেটিও বন্ধ রয়েছে। এমনকি যারা করোনার আগে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন তাদের বেশির ভাগই পাসপোর্ট হাতে পাননি। তারাও অপেক্ষায় আছেন।
সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ে আছে। অবশ্য সাধারণ ছুটির মধ্যে (২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত) স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের বাইরে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর সুপারিশ অনুযায়ী প্রবাসী কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মতে, নতুন পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণের পর বেশির ভাগেরই ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ নেয়া সম্ভব হয়নি। আবার যাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়নি। এসব কারণে পাসপোর্ট তৈরির কাজ আটকে আছে। সে জন্যই নতুন পাসপোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে লাখ লাখ আবেদনকারীকে।
তাদের মতে, বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষের বিদেশ যাতায়াত নেই। সে কারণে পাসপোর্ট নেয়ার তাড়াও নেই। তবে ২৩ মার্চের আগে নতুন পাসপোর্ট নেয়ার জন্য যেসব আবেদন পড়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে। আবার বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের যেসব আবেদন বিভিন্ন দূতাবাস হয়ে অধিদফতরে এসেছে, সেসব পাসপোর্ট সীমিত আকারে ছাপা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অফিসের পাসপোর্ট ও পরিকল্পনা শাখার উপপরিচালক মো: শাহাদাৎ হোসেন সোমবার জানান, করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট, এমআরপি পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণ, তৈরি ও বিতরণ বন্ধ আছে। বর্তমানে শুধু পাসপোর্ট নবায়নের কাজ চালু রয়েছে। কবে নাগাদ নতুন পাসপোর্ট বিতরণ ও নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও চলতি মাসে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে তিনি জানান।
দেশে দুই ধরনের পাসপোর্ট চালু আছে। ২০১০ সাল থেকে চালু হয় যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট, যা এমআরপি নামে পরিচিত। আর এ বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও বিতরণের সব কাজ বন্ধ করে দেয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। এর পর থেকে আর কাউকে ইপাসপোর্ট ও এমআরপি দেয়া হয়নি।
পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, আগে দিনে ২০ হাজারের মতো পাসপোর্ট বই ছাপা হতো। সামাজিক দূরত্ব মেনে এখন দিনে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজারের মতো পাসপোর্ট ছাপা হচ্ছে। এ সময়ে যাদের পাসপোর্ট খুবই জরুরি বা মেয়াদ শেষ হয়েছে, শুধু তাদেরই পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। কারো নতুন পাসপোর্টের দরকার হলে তাকে করোনাকালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তারা।
Discussion about this post