দেলোয়ার হোসেন সুমন, সৌদি আরব প্রবাসী: আমি একজন প্রবাসী আমাদেরকে বহু নাম ডাকে কেউ ডাকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা কেউ ডাকে সোনার ছেলেরা আবার কেউ কেউ কামলাও ডাকে। অনেকে দেশের সম্পদও ভাবে।কিন্তু মা বাবাই সেই ছোট্ট বেলার নাম নিয়েই ডাকে।যে নামে রয়েছে আদর ভালবাসা শাসন ঘিরে আছে অনেক স্মৃতি। যে ভাবে স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশ পাড়ি জমায় প্রবাসীরা সফলতার মুখ খুব কম প্রবাসী দেখে। কষ্টের জেলখানা প্রবাস নামে দু-তিন বছর থাকতে হয় তাদের। পরে স্বদেশে আসেও কষ্ট পোহাতে হয় সেই প্রবাসীদের।
গত ২০ অক্টোবর ২০১৯ বিকেল ৫ টায় সৌদি আরব মদিনার উদ্দেশ্য আমার ফ্লাইট ছিল। ১৯ তারিখে বাড়ী থেকে বের হতে চেয়েছিলাম। শরীরটা তেমন ভালো নেই দেখে আম্মা বাবা আমার স্ত্রীসহ সবাই ১৯ তারিখে বের হতে দেয়নি বললো ৫টায় বিমান ছাড়বে সকালে বের হলে ১টায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে। সবাই রিকুয়েষ্ট করল তাই সকালে বের হলাম। নোয়াখালী থেকে সকাল ৮টায় রওনা দিলাম খুব সুন্দর ভাবে আসতেছি হঠাৎ কুমিল্লা ক্যান্টেনমেন্টের পরে বাস বন্ধ করে দিল চালক জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। বললো সামনে (অবরোধ) কিসের অবরোধ ট্রাক মালিক সমিতির। চিন্তায় পড়ে গেলাম এখন কি করি। অবরোধ চলছে ট্রাক মালিক সমিতির কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে চলতে দিচ্ছেনা বাস। এটা আমাদের দেশের কালচার। আমাকে ৩টার আগেই পৌঁছাতে হবে এয়ারপোর্টে । সামনে জ্যাম সব গাড়ি বন্ধ বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম সাথে ছিল ছোট ভাই কাশেম তার সহযোগিতায় আমার জন্য স্বস্তির নিশ্বাস।
আর পারছিনা হাঁটতে.. ভ্যানগাড়ী- রিক্সা- অটোরিকশা দেখে সবাই ভীড় জমাচ্ছে কারও রোগী কারও জরুরি কাজ কেউ প্রবাসী এয়ারপোর্ট যাবে সবাই ছোটাছুটি করছে। অনেক কষ্টের পর ভ্যানগাড়ীতে করে চিটাগং রোড পর্যন্ত আসলাম। কি আর করা যদি থাকে কপালে । তখন দুপুর ২টা এয়ারপোর্টে যাওয়ার মতো কোনো গাড়ী পাচ্ছিনা। দাঁড়িয়ে আছি আর চিন্তা করতেছি কি করবো। ছোট ভাই সহ পরামর্শ করলাম উবার করে যাওয়া যায় কিনা। সিদ্ধান্ত ওকে কিন্তু মালামাল কি করবো আইডিয়া আসলো হোন্ডার পিছনে বসে দুই ব্যাগ দুজনে মাথায় নিয়ে নিলাম কি আর করা। রওনা দিলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে হায়রে কষ্ট এর নাম প্রবাসী।
কিছু দূর গিয়ে চালককে বললাম ভাই একটু দাঁড়ান ঘাড়ে ব্যথা করছে। এবার মাথা থেকে পায়ের রানে নিয়ে নিলাম সমস্যা হচ্ছে কতক্ষণ রাখা যায় রাখতে তো হইবে। আমি সৌদি আরব যাচ্ছি সবাই আমাকে প্রবাসী বলবে দেশের জন্য রেমিট্যান্স যোদ্ধা হবো দেশের অর্থনীতি স্বচ্ছল রাখবো পরিবারকে সুখে রাখবো। আপনার ঘটনাটি পড়তে কষ্ট হয়েছে। আমার ঘটনা গুলো বাস্তবে অনুভব করতে চোখের পানি ঝরেছে।
আমি প্রবাসী রক্ত মাংস পানি করে যে টাকা আয় করি সে টাকা বাংলাদেশে ব্যাংকে পাঠায় তাকে রেমিট্যান্স বলে। আর পরিবার পরিজন ছাড়া বছরের পর বছর দেশের বাহিরে থাকাকে পরবাস বলে। এয়ারপোর্টে আসলে দেশের মানুষ কামলা বলে সাদর অভ্যর্থনা করে। এই হলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এই হলো সোনার ছেলে। দেশের মাটিতেও কষ্ট পোহাতে হয় প্রতিনিহত। কি চেয়েছি কি পেয়েছি দেশ উন্নত হচ্ছে আমাদের দিনে দিনে অবনতি ঘটছে। সরকারি ভাবে বিশ্লেষণ করে তদারকি করে এ বছর কতটা মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসলো তদারকি হয়না কুলুর বলদদের।
এয়ারপোর্টে এক পুলিশ ভাইয়ের কথা দেরি করলেন কেনো।বললাম পথে সমস্যা হয়েছে উঃ দিলো আপনার জন্য কি বিমান দাঁড়িয়ে থাকবে। যতসব অশিক্ষিত গুলো বিদেশে যায়। নিরবে ভালবাসা- দেখিয়ে চলে আসলাম কারণ আমি প্রবাসী কুলুর বলদ। ঘাড়ের মধ্যেও ভর করতে হয় বিদেশ গিয়ে মনের মধ্যেও কষ্টের ভর সহিষ্ণুতা করতে হয় স্বদেশে। টাকা দিয়ে কিনে নিলাম কষ্টের প্রবাসের অভিজ্ঞতা ।
Discussion about this post