জামালপুর সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু তাই নয়, ওই গৃহবধূর স্বামীকে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রেখে তা আত্মহত্যা বলে প্রচারও করেছে।
শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটলেও সোমবার রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতা গৃহবধূ ওই গ্রামের ছানোয়ার হোসেন, শাওন ও রফিজ উদ্দিন নামে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে শাওনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জামালপুর সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্যাতিত গৃহবধূ বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ গভীর রাতে শাওন নামে এক আসামিকে মধুপুর থেকে গ্রেপ্তার করে।
কাঠমিস্ত্রির স্ত্রী নির্যাতিতা ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার রাত ৮টায় তিনি ঘরের বাইরে নলকূপ থেকে পানি নেয়ার সময় ছানোয়ার, শাওন ও রফিজ তাকে মুখ চেপে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। এরপর তিনজনই তাকে ধর্ষণ করে। তখন তার স্বামী বাজার থেকে ফিরলে তাকে আটকায় ওই দুর্বৃত্তরা। তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যার পর বাড়ির পাশে অন্য একটি গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে।
শনিবার সকালে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গৃহবধূর স্বামীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় এবং একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। কিন্তু ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি বা ধর্ষণের ঘটনায় কোনও মামলায় নেয়নি পুলিশ।
নির্যাতিতদের পরিবারের অভিযোগ, এলাকার প্রভাশালীরা ধর্ষণকারীদের পক্ষ নেয়। সোমবার রাতে ওই গৃহবধূকে নিয়ে জামালপুর প্রেস ক্লাবে হাজির হন তার শ্বশুর। তখন গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতায় তাকে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই গৃহবধূর মামা শ্বশুর আমির খান অভিযোগ করেন, থানায় মামলা করার পর শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক ফনি মোবাইলে ফোন করে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এজন্য তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. হাসানুল বারী শিশির জানান, ভিকটিম শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর আলামতও পাওয়া গেছে। তার গোপনাঙ্গ দিয়ে এখনও রক্ত ঝড়ছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য তাকে গাইনি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক ফনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় তিনি কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করেননি। নির্যাতিত পরিবার মামলা করলে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।
এর আগে জামালপুর থানার ওসি সালেমুজ্জামান বলেছেন, গণধর্ষণ বা হত্যার কোনো বিষয় সম্পর্কে তারা অবগত নন। ফোনে ওই গৃহবধূর কাঠমিস্ত্রী স্বামীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসআই গুলজার হোসেনকে পাঠানো হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর পর অপমৃত্যুর মামলা রুজু হয়। গণধর্ষণ বা হত্যার কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। এ ধরণের অভিযোগ পেলে নিয়মিত মামলা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post