নতুন বছরে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার হবে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে ভোক্তা ঋণের সুদহার পড়বে প্রায় ১৩ শতাংশ।
ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সবশেষ ডিসেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ১৪ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে এখন সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে জানুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ছয় মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না।
ডিসেম্বর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে জানুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে, নতুন ২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ।
তবে জানুয়ারিতে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক নিতে পারবে ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ সুদ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যা ডিসেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ছাড়া ডিসেম্বরে বড় অঙ্কের ঋণে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসাবে ডিসেম্বর মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে জানুয়ারিতে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসে একটু করে বেড়ে গত মে মাসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন ও জুলাইয়ে সামান্য কমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে নামে। এরপর আগস্ট থেকে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ৯০ দশক থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমা তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকারের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় নীরব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হলো, সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সেই শর্তের আলোকে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এত দিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে তারা। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত জুন ও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার পর আগস্ট, সেপ্টেম্বরে মাসেও তা আবার বেড়েছে। সবশেষ গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিবিএসের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।
জেআই/
Discussion about this post