বর্তমান সময়ে এখন সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি বগুড়ার হিরো আলম। যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন তিনি। ঠিক তেমনি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন তুলে সারাদেশের মতো নন্দীগ্রাম-কাহালুতেও আলোচনায় এসেছেন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসপাড়ায় তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যারা তাকে দেখেননি তারা নতুন প্রজন্মের কাছে নাম শুনেই চিনে নিচ্ছেন।আসলেই তিনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারবেন কীনা তা নিয়েও চলছে হিসাব-নিকাশ। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে জনসমর্থনের কথা বলছেন। কিন্তুু বাস্তব চিত্র কি ? সেটি খুঁজে বের করতেই অনুসন্ধান চালানো হয় সারা ফেলানো হিরো আলমের নিজের বাড়ি এরুলিয়া ও নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকার তরুণ প্রজন্ম হিরো আলম সম্পের্কে জানলেও প্রবীণরা তাকে চেনেই না। প্রবীণদের কাছে হিরো আলম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা বলেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যেভাবে এলাকায় গণসংযোগ করেছেন হিরো আলম বগুড়া-৪ আসনে গণসংযোগ করেননি। এমনকি তার নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।তথ্যমতে, হিরো আলম লাঙ্গল প্রতীকে যে আসনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেই বগুড়া-৪ নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনে এবার ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮১ জন।২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শহীদুল আলম দুদু (নৌকা) প্রতীকে ৭২ হাজার ৪৬৪ ভোট পান এবং বিএনপি থেকে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা (ধানের শীষ) প্রতীকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন (নৌকা) প্রতীকে ৭৫ হাজার ৯৯১ ভোট পান এবং বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল (ধানের শীষ) প্রতীকে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজ্বী নূরুল আমিন বাচ্চু (লাঙ্গল) প্রতীকে ১৩ হাজার ৪৮৯ ভোট পান এবং বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন (মর্শাল) প্রতীকে ২২ হাজর ২০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।এবার হিরো আলমের বিপক্ষে প্রার্থী রয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় জাসদের সহ-সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মমতাজ উদ্দিন, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন কবিরাজ, বগুড়া জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হেলালুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আলহাজ অধ্যাপক আহছানুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম।
বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, সংসদ সদস্য জেডআইএম মোস্তফা আলী মুকুল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রাফি পান্না, জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফজলে রাব্বী তোহা, পৌর বিএনপির সভাপতি আহসান বিপ্লব রহিম, জেলা যুবদলের সদস্য এমএ রাজ্জাক সুমন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম আকতার জাকির, প্রবাসী বিএনপি নেতা মিন্টু ও আনিছুজ্জামান আনিছ। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজ্বী নূরুল আমিন বাচ্চুও মনোনয়ন উত্তোলন করেছেন।নন্দীগ্রাম উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজ্বী নূরুল আমিন বাচ্চু বলেন, নির্বাচনী এলাকায় হিরো আলমের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তাকে কেউ চেনেই না। আর হিরো আলমকে মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।কাহালু উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ইব্রাহিম আলী ধুলু বলেন, কে এই হিরো আলম। এটা কি যাত্রা পার্টি নাকি? নাচ গান করলেই মনোনয়ন পেয়ে যাবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হিরো আলমের কোনো যোগাযোগ নেই। হঠাৎ করেই মনোনয়ন তুলেছে পত্রিকা-টিভিতে দেখছি। তাকে তরুণ প্রজন্ম ভালো চিনতে পারে। কিন্তুু ইউটিউব, ফেসবুক আর ভোটের মাঠ এক কথা নয়।
সেলিব্রেটিবিডি/ এইচআর
Discussion about this post