রহমান মতি:
ডাকাত সম্প্রদায়ের জীবযাপন নিয়ে নির্মিত টেলিফিল্ম ‘দানব।’ অ্যাকশন ঘরানায় হত্যা, হিংসা, ক্রোধ, প্রতিশোধ, প্রতিঘাত এমন নেগেটিভিটি থেকে গল্পের প্লট এগিয়েছে। নির্মাণের ধারাবাহিকতায় গতানুগতিক থেকে বেরিয়ে টেস্ট বদলানোর জন্য হলেও এ ধরনের টেলিফিল্ম ভিন্নতা দেয়।
মোশাররফ করিম বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা। তার প্রতি দর্শকের এক্সপেকটেশন অনেক। তার নাটক/টেলিফিল্ম নির্বাচনে বেশ কিছুদিন ধরেই দর্শক আশাহত। ভাঁড়ামো জাতীয় গল্পের দিকে তার আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। ঠিক তখনই ‘দানব’ টেলিফিল্মটি তাকে আবারও আলোচনায় এনেছে।
ডাকাত সম্প্রদায়ের জীবনযাপনে যা ঘটে সবই উঠে এসেছে টেলিফিল্মে। দল গঠন করা, অপারেশনে যাওয়া, আধিপত্য বিস্তার করা, হত্যা করা, বিপদের মুখোমুখি হওয়া, নারীর উপর অত্যাচার, নিজের জীবন রক্ষা, বাস্তবতার শিকার হওয়া। প্রতিটি বিষয়ই ছিল পরিকল্পিত এবং বাস্তবসম্মত।
মোশাররফ করিম এমন এক অভিনেতা যার দেয়ার মতো অনেক আছে। তিনি নিজেও জানেন না কত শক্তিশালী অভিনয়দক্ষতা তার। ‘দানব’ টেলিফিল্মে নিজের দুর্দান্ত অভিনয় দেখিয়েছেন। টেলিফিল্মে এন্ট্রি সিনেই তাকে মোটর সাইকেল থেকে নামার সময় ভয়ঙ্কর এক্সপ্রেশন দিতে দেখা গেছে। যতগুলো মানুষ হত্যার সিকোয়েন্স ছিল সবগুলোতে তার রুদ্রমূর্তি ভয় পাইয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। কিছু সিকোয়েন্স পয়েন্ট আউট করা যেতে পারে – এক. প্রথম পাঁচ মিনিটের মাথায় পানিতে ডুবিয়ে একজনকে মারার সিকোয়েন্সে মোশাররফ করিমকে দাঁত চেপে অ্যাঙ্গার এক্সপ্রেশন দিতে দেখা গেছে। ভয় পাইয়ে দেয়ার মতো অভিনয়। দুই. ওস্তাদকে মারার সময় যে তাকে আঘাত করেছিল জেল থেকে ফেরার পর তার দেখা পায়। ক্ষমা চাওয়ার জন্য লোকটা আসে। তার সাথে জাবাবদিহিতার সময় মোশাররফ করিমের বডি ল্যাংগুয়েজ অনবদ্য। তিন. রামদা ধার দিচ্ছিল তার সাথে থাকা গফুর। রামদা হাতে নিয়ে গৃহকর্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তার ডায়লগ ডেলিভারিটি ছিল ভয়ঙ্কর-‘এতদিনেও জুলমুইত্যারে চিনলি না!’ চার. গফুরের পরিচয় ফাঁস হবার পর সে জবাব চায়। তাকে কৌশলে মাটিতে ফেলে বুকে পা দিয়ে মোশাররফ করিম বলেন-‘তোর মায়ের বুলি ফুটছিল তোরও ফুটছে। আর দেরি করা ঠিক হইত না বাজান।’ খুব স্বাভাবিকভাবে বলেন কিন্তু ক্লোজ শটে তার মধ্যে ছিল অগ্নিমূর্তি। এভাবে পুরো টেলিফিল্মে তিনি অভিনয়ে ছিলেন সত্যিকারের দানব।
টেলিফিল্মে গ্রুপিং এর বিষয়টা চমৎকার দেখানো হয়েছে। ‘বদর বাহিনী’-র সাথে মোশাররফ করিমের গঠন করা ডাকাত দলের সংঘাত লেগেই থাকে। পলিটিক্স দেখানো হয়েছে। দলের মধ্যে মোশাররফের লোকেরা নিজেরা শলাপরামর্শ করে নিজেদের জন্য।
ডাকাত হলেও মানুষ তো তাই মোশাররফ করিম বাবা হিশাবে খুব দরদী। নিজের মেয়েকে খুব ভালোবাসেন, মেয়ের জামাইকেও। তাদের ভালোর জন্য যে কোনো কিছু করতে রাজি। এটা ছিল টেলিফিল্মের মানবিক দিক।
টেলিফিল্মের ক্লাইমেক্সটি অনেক দর্শকের পছন্দ নাও হতে পারে। কারণ প্রধান চরিত্র মোশাররফ করিমের পরিণতি কি হবে বা কিভাবে হবে তার পেছনে যুক্তি কাজ করবে দর্শকের। জুঁই ভাইটাল হয়ে ওঠে টেলিফিল্মে একটা সময়। অন্যান্য চরিত্রের ন্যাচারাল অভিনয় টেলিফিল্মটিকে পরিপূর্ণ অভিনয়সমৃদ্ধ করেছে।এই ঈদের টেলিফিল্মের মধ্যে ‘দানব’ বিষয়, অভিনয় ও উপস্থাপনায় অন্যতম সেরা কাজ হয়ে থাকবে।
সেলিব্রেটিবিডি/এনজেটি
Discussion about this post