বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বৈরাচার হাসিনা দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এমনভাব গড়ে তুলেছিল, যাতে দেশের জনগণ পার্শ্ববর্তী দেশে চিকিৎসা নিতে যেতে বাধ্য হয়। সে সুযোগে দেশের টাকা বিদেশে চলে যায়। তাই আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে করে সেখানে ধনী-গরিব সবাই সঠিক চিকিৎসা পায়।’
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভাচুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশের মানুষ বিএনপিকে বিশ্বাস করে। ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসকে আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আস্থা অর্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে দেশ পুনর্গঠন করা। কাজেই জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের দেশ পুনর্গঠন করতে হবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণে, রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অনেক আগেই ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। দিয়েছি বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচিও। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। তারা যে সংস্কার প্রস্তাব করছে, সেসব সংস্কারের অধিকাংশই বিএনপি আড়াই বছর আগেই বলেছিল। আমার বিশ্বাস করি, এ দেশকে এগিয়ে নিতে, মানুষের জীবনযাপন উন্নত করতে হলে কতগুলো ব্যাপারে সংস্কার করতে হবে। এজন্যই আমরা সর্বপ্রথম সংস্কার করতে চেয়েছি। সে প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের পরিকল্পনা দেশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেছি। এখন জনগণের আস্থা নিয়ে এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। তা না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। দেশের মানুষ আরও কষ্ট পাবে।’বিএনপির ওপর জগণের আস্থার কথা উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ কী তা দেশের মানুষ জানতে চায়। আপনাদের কী ধারণা আছে কেন জানতে চাই? কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চায়। তাই তারা দেশের ও জনগণের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জনাতে চায়।’তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রথম চাওয়া প্রতিষ্ঠা হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অধিকাংশ ভোট পাবে। এরপর আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব মোকাবিলার জন্য বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আমাদের ওপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার নেতাকর্মীদের। আমাদের উচিত এ আস্থাকে ধরে রাখা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশের বেকার যুবকদের দেশে ও বিদেশে ট্রেনিং দিয়ে কর্মসংস্থান করে দিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তারাই আগামীর বাংলাদেশ।’
ফারাক্কার ন্যায্য পানির হিস্যা পাওয়ার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘ফারাক্কার কারণে আজ পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এক সময়কার সুজলা-সুফলা এ অঞ্চল আজ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এ পানির জন্য প্রয়োজনে অন্তর্জাতিক আদালতে যাব। এমনকি জাতিসংঘে গিয়ে হলেও পানির ন্যায্য অধিকার আমরা আদায় করেই ছাড়ব। পাশাপাশি আমাদের দেশের খালগুলো পানিতে ভরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে আগামী দিনে পানি নিয়ে যদি আবারও বাধা আসে তাহলে মানুষ এগুলো ব্যবহার করতে পারে।’
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির পক্ষেই এখন দেশকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা সম্ভব। কারণ, আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে দেশ কীভাবে দুর্ভিক্ষে ছেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি শহীদ জিয়ার আমলে কীভাবে আবার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দুর্ভিক্ষকে দূর করে খাদ্য রপ্তানি করেছিলাম। এ কাজটি কিন্তু বিএনপি অতীতেই করেছে। তাই দেশকে কীভাবে পুনর্গঠন করতে হবে তা বিএনপি ভালোভাবেই জানে। দেশের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপি দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে এটিই তাদের জনগণ মনে করে।’
এর আগে প্রায় দেড়যুগ পর রোববার দুপুরে নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের সামনের রাস্তায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
সম্মেলনকে ঘিরে সকাল থেকে সম্মেলনস্থলে যোগ দিতে দূরদূরান্ত থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে নগরীতে প্রবেশ করেন। দুপুর গড়ানোর সাথে সাথে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্মেলনস্থলে জায়গা না পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা পদ্মা নদীর ধারসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
দ্বি-বার্ষিক এই সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা।
সদস্য সচিব মামুন অর রশিদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত খালেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলিমুজ্জামান আলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুর্নবাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মিলন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাদ, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউল হক রানা, মতিউর রহমান মন্টু, আসলাম সরকার, মহানগর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ সুইট, বর্তমান আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুন অর রশিদ মামুনকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর আহ্বায়ক কমিটির পরিধি বাড়িয়ে ৬১ সদস্যের করা হয়। তারপর থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এই কমিটিতেই চলছিল রাজশাহী মহানগর বিএনপি।
Discussion about this post