দুর্ভাগ্যবশত’ প্রবাস জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার দুপুরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কাউন্সিল অধিবেশনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশে ৫০ বছরেরও বেশি সময় হয়েছে…আমরা হাঁটি হাঁটি করেও বারে বারে বাধাগ্রস্ত হয়েছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চালু করতে।
“দুর্ভাগ্যবশত আমাকে বহু বছর প্রবাস জীবনে কাটাতে হয়েছে, কাটাতে হচ্ছে।”২০০৭ সালে এক/এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান।
২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় কারামুক্ত হয়ে সপরিবারে লন্ডনে চলে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক।
আওয়ামী লীগের সময়ে তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। দায়ের করা হয় শতাধিক মামলা।আদালতের চোখে তিনি হয়ে যান ‘পলাতক আসামি’। এমনকি তার বক্তব্য বিবৃতি প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা আসে। এর মধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারেককে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়।
ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু আর মায়ের কারাগারে যাওয়ার মত দুঃসময়েও তার দেশে ফেরা হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচনের ঘোষণার আসার পর তারেক রহমানের দেশের ফেরা বিষয়ে কথা হচ্ছে। তিনি নিয়মিতই দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন।ড্যাবের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি ‘জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য’ সর্বত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা বিএনপির কাছে। এই প্রত্যাশার খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ… কী সেটি? একটি ব্যবস্থা তৈরি করা, একটি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা তৈরি করা।
“আমরা যদি একটি সঠিক স্বচ্ছ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা সবর্ত্র জবাবদিহিতা গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি এখানে (ড্যাব) শুরু করতে পারি, ধীরে ধীরে আমরা আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ে শুরু করতে পারব। আমরা যদি দলের বিভিন্ন পর্যায় শুরু করতে পারি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইনশাআল্লাহ আমরা সামগ্রিকভাবে দেশের স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে আমরা ধীরে ধীরে জবাবদিহিতা শুরু করতে পারি।”
দীর্ঘদিন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান ইংল্যান্ডে জবাবদিহিতা থাকার কথা তুলে ধরে বলেন, সেখানে জনগণ সেবা পাচ্ছে।
কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থাপন করা ডিজিটাল ম্যাগাজিনে তুলে ধরা বিভিন্ন সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এরকম সমস্যা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে, এরকম সমস্যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আছে, এরকম সমস্যা বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় আছে, এরকম সমস্যা বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় আছে, এরকম সমস্যা বাংলাদেশের বলা যায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্র বিরাজমান।”
লন্ডনে তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলে ধরে তিনি বলেন, “একটি অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, যেহেতু এই দেশে একটি জবাবদিহিতা আছে সেজন্য একজন রোগী যখন জিপির কাছে অথবা হসপিটালে যাচ্ছে সে ন্যূনতম একটি সেবা পাচ্ছে। অর্থাৎ শুধু একজন রোগী হিসেবে নয়, যেকোনো জায়গায় যেকোনো মানুষ যখন যাচ্ছে তার যেটি প্রাপ্ত, সেই প্রাপ্য সেবা সে পাচ্ছে।”
তার পর্যবেক্ষণ, ইংল্যান্ডে সেবা পাওয়ার এমন ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনের কারণ হল- বহু বছরের প্রচেষ্টায় সেখানে তারা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা গড়ে ওঠেনি।
ঢাকার কাকরাইলের উইলন্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিএনপির চিকিসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব’ এর জাতীয় কাউন্সিল-২০২৫ হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘৩১ দফা বাস্তবায়নে সহযোহিতা চাই’
তারেক রহমান বলেন, “আজকে সংস্কার নিয়ে কথা-বার্তা, আলোচনা হচ্ছে। আপনাদের প্রত্যেকের মনে আছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই সংস্কারগুলো, এই যে যত সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে তার ৯৯ ভাগ এই প্রস্তাবনাগুলো আজকে থেকে প্রায় আড়াই বছর আগে বিএনপি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল। সেই কথাগুলোই বিভিন্নভাবে আজকে সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন আলাপ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে।”
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে নিয়ে বিএনপির দেওয়া ৩১ দফায় চিকিৎসা সংক্রান্ত যে দফাটি আছে তা বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “শুধুমাত্র সরকার, শুধুমাত্র আমাদের দলের সংসদ সদস্য অথবা শুধুমাত্র আমাদের নেতৃবৃন্দের দ্বারা সম্ভব নয় ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা। আমাদেরকে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
Discussion about this post