জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিএফআই ও এনএসআইসহ বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এজেন্টরা জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের খবর প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখতে সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়েছিল।
এই প্রতিবেদনে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালানোর ফলে সাংবাদিকরাও কিভাবে এর শিকার হয়েছিলেন সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ডিজিএফআই ও এনএসআই এজেন্টরা, মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ফোন করে এবং তাদের অফিস ও বাড়িতে এসে ভয় দেখিয়ে প্রতিবেদন ও সম্প্রচারে পরিবর্তন করতে বলেন।’
ওএইচসিএইচআর-এর অফিস ১২ ফেব্রুয়ারি জেনেভা অফিস থেকে ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’- শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে ও গ্রেফতার করে নির্বিঘে্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের অধিকার হরণ করেছে।
সাংবাদিকরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যম মালিকরা ভয় ও চাপের একটি সাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল- যা বিক্ষোভ সম্পর্কে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করতে অথবা বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন বা বলপ্রয়োগ করার বিষয় তুলে ধরতে দেয়নি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর পরিবর্তে কিছু গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রকাশ করে এবং এগুলো গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা তখন ছড়িয়ে দেয়া হয়।
একটি ক্ষেত্রে, র্যাব কর্মকর্তারা একটি গণমাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশকারী একজন সাংবাদিককে শনাক্ত করতে বন্দুকের মুখে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুসারে, এনএসআই এজেন্টরা এই তথ্য প্রকাশ না করার জন্য সেই গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছিল।
১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকা, সিলেট ও সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভ চলাকালীন কমপক্ষে ছয় সাংবাদিক নিহত ও প্রায় ২০০ সাংবাদিক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালানোর সময় সাংবাদিকরাও এর শিকার হন। অন্যদিকে সংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে প্রায়ই সরাসরি সহিংসতার শিকার হন।
আলোকচিত্রী সাংবাদিকরা বিশেষ করে বিভিন্ন পক্ষের আক্রমণের শিকার হন, এই আক্রমণকারীরা রাজপথে তাদের এই বিক্ষোভ বিরোধী অবস্থানের প্রমাণ রাখতে চাননি। ১৮ জুলাই, যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভ কভার করার সময় পুলিশের গুলিতে একজন সাংবাদিক নিহত হন।
১৯ জুলাই সিলেটে, পুলিশ বিএনপির সমাবেশ লক্ষ্য করে শটগানের গুলি চালায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন তাদের পতাকার লাঠি ও ইট দিয়ে আত্মরক্ষা করে। পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও ছিলেন, যিনি বিক্ষোভে ছবি তুলছিলেন।
১৯ জুলাই, ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের আশপাশে পুলিশ একজন আলোকচিত্রীকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, যদি তিনি ছবি তুলতে থাকেন, তাহলে তাকে গুলি করা হবে।
কয়েক মিনিট পরে, একই এলাকায় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আরেকজন সাংবাদিকের ওপর মারাত্মক শটগান থেকে গুলি ছুড়ে, যিনি তার ক্যামেরাম্যানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাইক্রোফোন ধরেছিলেন। ধাতব গুলিটি ওই সাংবাদিকের ঘাড় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আঘাত করলে তিনি আহত হন।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই দিনে, পল্টনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালালে একজন সাংবাদিক আহত হন।
Discussion about this post