আমরা হারবো না হারবো না, তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না’। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিবাদী সেই গানের ভাষা যেন বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন বাংলাদেশের সাহসী এক কৃষক। ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থ্যানের মুখে দিল্লির সেবাদাসী হাসিনার পলায়নের পর সীমান্তে যেন এক শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখছে আগ্রাসী ভারত।
সীমান্তে ভারতের বিএসএফের আগ্রাসন রুখে দিতে বিজিবির পাশে কাস্তে হাতে ডিফেন্স পজিশনে থাকা এক সাহসী কৃষকের ছবি ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবিটি শেয়ার করে অনেকেই লিখেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট ঠিক এমনই ছিলো। নিজ মাতৃভূমি রক্ষায় এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না আধিপত্যবাদী ভারতকে।
জানা যায়, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বস্তাবর সীমান্তে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বাধায় কাজ বন্ধ করে বিএসএফ।
বর্তমানে সেখানে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ-১৪ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সতর্ক অবস্থানে আছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে কাঁটাতারের বেড়া দিতে আসার খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় বিজিবির সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ বাঙালিরাও।
ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাজারো মানুষ বিজিবির সঙ্গে যোগ দিয়ে মিছিল দিচ্ছে। তারা বলতে থাকে আমরা অন্যায়ভাবে একবিন্দু মাটি ছাড় দিবো না। জীবন দিবো তারপরও ভারতীয়দের কাছে অন্যায় কোনো আপস মেনে নিবো না। সীমান্তে বিজিবির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাধারণ জনতার গড়ে তোলা এই সম্মিলিত প্রতিবাদ প্রশংসায় ভাসছে। হাসিনামুক্ত নতুন সার্বভৌম বাংলাদেশ থেকে ভারত যেন পেল এক কড়া বার্তা।
কৃষকের ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে নেটিজেনরা লিখেছেন, এই জাতিরে আর দাবায়ে রাখা যাবেনা। মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু। ৪৭ থেকে ৭১, ৯০ বা ২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হাতে কাচি, মাথায় গামছা বাঁধা মানুষেরাই দেশের জন্যে বিনাস্বার্থে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে।কিন্তু চরম সত্য হলো উনাদের কেউ মূল্যায়ন করে নাই। না ৪৭ এ, না ৭১এ, না বর্তমান।বাংলার কৃষক শ্রমিক দিনমজুর বরাবর’ই শোষিত নির্যাতিত।আমাদের রাজনৈতিক বা দেশ যারা চালায় তারা নষ্ট ভন্ড। তারা বাংলাদেশের গরিব দুঃখির মাথায় কাঠাল ভেঙে খাবে এবং এটা তাদের তাদের অধিকার বলে মনে করে।
জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ এপ্রসঙ্গে একটি ইতিহাস উল্লেখ করে ফেসবুকে লিখেছেন, রৌমারী সেই তরুণ কৃষক মিনহাজের কথা মনে আছে? যে ভোরবেলা ক্ষেতে গিয়েছিল স্যালো মেশিন স্টার্ট দিতে। হঠাৎ দেখতে পায়, শত শত বিএসএফ সেনারা বাংলাদেশে ঢুকছে। বিএসএফ সদস্যরা তার কাছে রৌমারী ক্যাম্পের অবস্থান জানতে চায়। ওই সাধারণ কৃষক তরুণ তার অসাধারণ দেশপ্রেম থেকে পুরো বিষয়টি চকিতে অনুধাবন করে ফেলে। সে বিএসএফকে বিডিআর ক্যাম্পের ভুল লোকেশন দেখিয়ে মিস ডাইরেক্টটেড করে ফেলে। আর দ্রুত বিডিআর ক্যাম্পে এসে বিডিআর সদস্যদের জাগিয়ে শত শত বিএসএফের বাংলাদেশের প্রবেশের তথ্য জানায়। বিডিআর সদস্যরা তাদের আসার আগেই দ্রুত নিজেদের প্রস্তুত করে ডিফেন্স পজিশন নিয়ে ফেলে।
এভাবেই এক সাহসী তরুণের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় বেঁচে যায় বিডিআর সদস্যদের প্রাণ এবং স্বাধীনতার পর ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজয়টি রচিত হয়। এই ছবিতে কাস্তে হাতে বিডিআরের পাশে ডিফেন্স পজিশনে বসে থাকা কৃষককে দেখে মিনহাজের কথা মনে পড়ল।
আসিফ আহমেদ প্রধান নামে একজন ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, হাতে রামদা, ঠোঁটে আকিজ বিড়ি পেছনে সরিষা ক্ষেত, সামনে বিএসএফ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট ঠিক এমনই ছিলো। নিজ মাতৃভূমি রক্ষায় এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু।
Discussion about this post