ভারতে ধর্ষণ মামলায় আওয়ামী লীগের চার নেতা গ্রেফতারের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে তাদের গ্রেফতারের সংবাদটি দৈনিক অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সিলেটসহ সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকেই সংবাদটি শেয়ার দিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এর আগে, রোববার দুপুরের দিকে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলকাতা পুলিশের সহায়তায় ওই চার নেতাকে গ্রেফতার করে শিলং পুলিশ। এরপর রোববার রাতেই তাদেরকে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে আনা হয়।
গ্রেফতার হওয়া নেতারা হয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ইলিয়াস আহমদ জুয়েল।
শিলং পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা সিলেট থেকে পালিয়ে শিলংয়ে অবস্থান করার সময় তাদের আবাসস্থলে এ ধর্ষণ হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম শিলং থানায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হলেও আরো দু’জন আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিটু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কলকাতার এ আবাসস্থল থেকে নাসির, মুক্তি, রিপন ও জুয়েল ছাড়াও সুনামগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানকেও গ্রেফতার করেছিল শিলং পুলিশ। পরে সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তাদেরকে ছাড়াতে তদবির শুরু করেন। এরপর মামলার এজহারে নাম না থাকায় সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দেয়া হয়।
কলকাতায় বসবাসরত সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় নেতা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তবে একটি সূত্র বলেছে, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি রিপন ও সদস্য জুয়েল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা নাসির ও যুবলীগ সভাপতি মুক্তিসহ এক আবাসস্থলে অবস্থান করায় তাদেরকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘শিলংয়ের মুভমেন্ট পাস নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় না জানিয়ে কলকাতায় চলে যাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালানোর পর শিলংয়ে ছিলেন নাসির উদ্দিনসহ ছয়জন। গত ১ ডিসেম্বর তারা শিলং ছেড়ে কলকাতা চলে যান।’
কলকাতায় অবস্থানরত এক নেতা বলেন, ‘শিলং ছেড়ে কলকাতায় আসার সময় তারা স্থানীয় থানায় অবগত করে আসেননি। পরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ খোঁজ নিলে ফ্ল্যাট কর্তৃপক্ষ তাদের থানায় যোগাযোগের জন্য বলেন। কিন্তু কলকাতা থেকে শিলংয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় তারা আবার সেখানে গিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি অবগত করেননি।’
কলকাতায় অবস্থানরত যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রিপন আর জুয়েল এ অপকর্ম করেছেন বলে শুনেছি। তবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যেহেতু আমি কলকাতায়। বাকিরা একই ফ্ল্যাটে থাকার কারণে ফেঁসে গেছেন। গ্রেফতার হওয়া জুয়েল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের খালাত ভাই জানিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘জুয়েল ও রিপনের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। তাই এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। একই ফ্ল্যাটে থাকায় নাসির ও মুক্তি ফেঁসে গেছেন।’
কলকাতায় অবস্থানরত এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমিও এমনটা শুনেছি। তবে ঘটনার সত্য মিথ্যা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তারা চারজন গ্রেফতার হয়েছেন এটা সত্য। তবে যতটুকু জানি তারা শিলং থেকে মুভমেন্ট পাস নিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতায় চলে আসার সময় নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় থানায় অবগত করে আসেননি। তারা যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেখান থেকে ফোন দিয়ে তাদের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য বলাও হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তারা আবার শিলং যেতে পারেননি। ফলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
Discussion about this post