সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে চালু হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম চালকবিহীন মেট্রো। গত ১ ডিসেম্বর থেকে রিয়াদ মেট্রো কার্যক্রম শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে নানা বৃহত্তর নগর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সৌদি আরব। যেমন: ‘দ্য লাইন’ ও ‘মুকাব’। এগুলো হলো দেশটির ভবিষ্যতের নগর পরিকল্পনার একেকটি আধুনিক মডেল, যেগুলোর মাধ্যমে অবকাঠামো আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে।
সৌদি আরবের বৃহত্তর নগর উন্নয়ন ও আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে চালকবিহীন এই মেট্রো।
রিয়াদ মেট্রোর ছয়টি রুটের মধ্যে ১ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে তিনটি রুট খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চতুর্থটি এবং পরবর্তীতে আরও দুটি রুট খুলে দেওয়া হবে।
এর মোট দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার (১০৯ মাইল) এবং এর মাধ্যমে রিয়াদের মূল প্রাণকেন্দ্র, ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলো এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাতায়াত করা যাবে।
পুরোপুরি চালু হলে রিয়াদ মেট্রো নেটওয়ার্ক প্রতিদিন ৩.৬ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে এবং এর ফলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যাবে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন টন (প্রায় ১০.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন) কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনও কমবে।
এটি মোট ৮৫টি মেট্রো স্টেশন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত জাহা হাদিদ আর্কিটেক্টসের ডিজাইন করা কিং আবদুল্লাহ ফিনান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট (কেএএফডি) মেট্রো স্টেশন। চোখ ধাঁধানো ডিজাইনে তৈরি এই স্টেশনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা খুব সহজে চলাচল করতে পারে। এছাড়া, এই স্টেশনের বাইরের অংশটি নজরকাড়া ঢেউ খেলানো জালের মতো ডিজাইনে তৈরি, যা রিয়াদের তীব্র গরম থেকে যাত্রীদের কিছুটা আরামদায়ক পরিবেশ পেতে সাহায্য করবে।
যাত্রী চলাচলের জন্য ৬৯টি অ্যালস্টম মেট্রোপলিস ট্রেন এবং ৪৭টি ইনোভিয়া মেট্রো ট্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে, সবগুলো ট্রেনেই বৈদ্যুতিক। এগুলো তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: ফার্স্ট ক্লাস, ফ্যামেলি ক্লাস ও সিঙ্গেল ক্লাস। ট্রেনগুলোতে আরামদায়ক আসন, এলইডি লাইটিং, এয়ার-কন্ডিশনিং এবং একটি যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা থাকবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনগুলো স্বয়ংক্রিয় এবং এগুলো আগে বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি), সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) এবং তাইপেই (তাইওয়ান)-এর চালকবিহীন মেট্রো হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রকল্পের জন্য রোলিং স্টক সরবরাহ করা সংস্থা অ্যালস্টম জানিয়েছে, চালকবিহীন এই ট্রেনগুলোর কার্যক্রম একটি অত্যাধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা ট্রেনের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলাসহ ট্রেনগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। পুরোপুরি এয়ার-কন্ডিশনড স্টেশনগুলোতে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর রয়েছে।
আরও জানিয়েছে, এছাড়া ট্রেনগুলোতে একটি উন্নত যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা রয়েছে, যা ট্রেনে এবং স্টেশন প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ও লাউডস্পিকারের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে রিয়েল টাইম তথ্য সরবরাহ করে।
বিশাল নিওম প্রকল্পের পাশাপাশি, সৌদি আরব ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের আশা করছে।
Discussion about this post