জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে পাড়ি জমান। সেখানে ২-১ দিন অবস্থানের পর আসামের গৌহাটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গৌহাটি থেকে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ সহজ বলে তিনি সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের কয়েক জন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সাথে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছে।
সিলেট সীমান্তের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চলতি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গভীর রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পালিয়ে যাওয়ার আগে প্রায় মাসখানেক সিলেট শহরের ইসলামপুর (মেজরটিলা) পুরবী আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ‘৫শ কোটি’র বাসা নামে পরিচিত আলিশান বাড়িতে অবস্থান করে প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে এখান থেকেই অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
সূত্র আরো জানায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পৌঁছে প্রথমে তিনি মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থানরত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পলাতক কয়েকজন নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ওই নেতাদের সাথে সলাপরামর্শ করে তিনি গৌহাটিতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে থাকার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানায় একটি সূত্র। অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে শিলং, গৌহাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ সিলেটের শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ছাড়া ইতোমধ্যে ভারত হয়ে যুক্তরাজ্যে নিরাপদে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পলাতক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিসিকের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেটের টিলাগড় এলাকার একাধিক দলীয় নেতাকর্মীর খুনি ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি রণজিত কুমার সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতা বিধান কুমার সাহাসহ ডজন খানেক নেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পালিয়ে যান। তবে সেই সুযোগ পাননি ওবায়দুল কাদের। তিন মাসের বেশি দেশের নানা স্থানে পালিয়ে ছিলেন। তাকে আটকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সেসব অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হত্যা মামলাসহ প্রায় দুই শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে।
সিলেট সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন। খুবই অল্পসংখ্যক নেতা দেশে রয়েছেন। গত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বেশির ভাগই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা ভারত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়ও পাড়ি জমিয়েছেন। আবার এমপি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা পুলিশের হাতে আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থান সত্ত্বেও কিভাবে জানা গেছে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিশেষ একটি মহল আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করছেন। এসব খবরে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে নেতাদের বিদেশে পাড়ি জমানোর কাহিনী জেনে বিস্মিত তারা।
Discussion about this post