চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত টিকটকার মুন্নি হত্যা মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত দু’জনকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে হাজির করে।
জানা গেছে, মুন্নিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযুক্ত তার (মুন্নি) চাচাতো ভাই স্বপন (২১) ও মানিক (২৩) স্বীকার করেছেন। জবানবন্দী শেষে পুলিশ প্রহরায় ওই দু’জনকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে নেয়া হয়।
গ্রেফতার মানিক চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ার টোকন আলী মুন্সির ছেলে ও স্বপন একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর দুপুরে খালেদা আক্তার মুন্নি হাটবোয়ালিয়া বাজারে মার্কেটে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। একই দিন সন্ধ্যায় তার মায়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় রাতে বাড়ি ফিরবে না বলে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের চরের মাঠে একটি মেহগনি বাগানের ভেতর এক নারীর অর্ধগলিত বিবস্ত্র লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। সিআইডি লাশের পাশে থাকা একটি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নাম্বার ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার খুঁজে পায়। এ সূত্র ধরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে।
পরে শুক্রবার ভোরে পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মানিক ও স্বপনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
জবানবন্দীতে উল্লেখ করা হয়, দুই যুবক কৌশলে মুন্নিকে চুয়াডাঙ্গা বোয়ালমারী গ্রামের চরের মাঠে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। ওই দুই যুবকের কাছে মুন্নি চুক্তির টাকা দাবি করলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মানিক ও তার সহযোগী স্বপন। হত্যার পর মানিক লাশের পায়ের নুপুর, আংটি ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মুন্নির মা আহারণ নেছা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামালের আদালতে হাজির করা হলে দু’জনে ১৬৪ ধারায় হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেন। বিচারক তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
হত্যা মামলার প্রধান আসামি মানিক স্বীকারোক্তিতে বলেন, হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে মুন্নি কৌশলে গাংনীতে তার এক পরিচিত লোকের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান আমাকে। সেখানে ‘জিম্মি’ করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। টাকা নেয়ার বিষয়টির প্রতিশোধ নিতে তার সাথে নিয়মিত মোবাইলফোনে যোগাযোগ রাখতাম। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ নভেম্বর বিকেলে আলমডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে মোটরসাইকেলযোগে আমার চাচাতো ভাই মিলে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসি। আমার চাচাতো ভাই মোটরসাইকেলটি বাড়িতে রেখে আসে সন্ধ্যায়। আমি ও মুন্নি পান বরজের ভেতরে অবস্থান নেই। মোটরসাইকেল রেখে আমার চাচাতো ভাইও ঘটনাস্থলে আসেন। পান বরজের পাশে মেহগুনি বাগানে যাই তিনজনেই। প্রথমে আমি…। পরে আমার চাচাতো ভাই…। এরপর মুন্নি চুক্তির টাকা চাইলে আমরা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রতিশোধ নিতেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করি।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত খোওয়াজ আলীর ছোট মেয়ে খালেদা আক্তার মুন্নি। পারিবারিকভাবে দুই বছর আগে তার বিবাহ হয় আসিফ নামের এক যুবকের সাথে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি মায়ের সাথে বসবাস করতেন। ৯ নভেম্বর দুপুরে হাটবোয়ালিয়া বাজারে মার্কেটে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। নিখোঁজ এর ৬ দিন পর তার অর্ধগলিত বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার হয় চুয়াডাঙ্গা বোয়ালিয়া গ্রামের চরেরমাঠ থেকে। ময়নাতদন্ত শেষে এদিন রাতেই লাশে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
Discussion about this post