পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইকো রিসোর্টের নামে ১০০ বিঘা জমিতে একটি ব্যক্তিগত রিসোর্ট ও পার্ক গড়ে তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
খুলনার তিন উপজেলায় এই তহবিলের টাকায় লাগানো হয়েছে সৌরবাতি। কিন্তু ওই এলাকায় এই ধরনের কোনো প্রকল্পই ছিল না। ছিল সুন্দরবন এবং আশপাশের উপজেলায় সুপেয় পানির প্রকল্প।
২০২০ সালে জলবায়ু তহবিলের টাকায় কেনা চারটি বাস আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তরে পড়ে থেকে ধুলোবালিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই বাস চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ সচেতনতার কাজে লাগানোর কথা ছিল।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু। ওই এলাকার মানুষ খাবার পানির সংকটে আছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। মুন্সিগঞ্জ ছাড়াও আরো পাঁচটি ইউনিয়নে চলছে খাবার পানির হাহাকার।
পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু বলেন, ‘এলাকায় কোনো সুপেয় পানি নেই। সরকারের দিক থেকেও উদ্যোগ তেমন নেই। অনেক কষ্টে বহু দূর থেকে পানি এনে জীবন চলছে।’
তিনি জানান, পানির সংকটের কারণে উপজেলার অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। নারী ও শিশুদের ৭০ শতাংশই নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। ফসলি জমিও লবণ পানির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সামিউল মনির বলেন, ‘লবণ পানির কারণে এখানে গবাদি পশুর খাদ্যেরও সংকট রয়েছে। অনেকেই কাদাপানির মধ্য দিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহের চেষ্টা করেন। তারা কাদাপানি সংগ্রহ করেন। পরে তা থিতিয়ে ওপর থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়।’
শ্যামনগর উপজেলার জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক ই ইলাহী বলেন, ‘জলবায়ু ট্রাস্টের কোটি কোটি টাকা থাকলেও তা আমাদের জন্য এতদিন খরচ হয়নি। এই এলাকায় কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সুপেয় পানির কোনো উৎস তৈরি করা হয়নি।’
জলবায়ু তহবিল
জলবায়ু তহবিলের টাকায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৩৮ কোটি টাকা। ২৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে নর্দমা নির্মাণের জন্য। এতে ব্যয় ৪১ কোটি টাকা। আর ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তহবিলটির মাধ্যমে ৯৬৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
গত বছরের ১৮ জুন সংসদে জানানো হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ওই সময় পর্যন্ত সর্বমোট তিন হাজার ৮৫২ কোটি টাকা জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ করা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে ৮৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গত ২০ অক্টোবর প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন দেশে জলবায়ু খাতে কোনো ঋণ ছিল না। গত ১৫ বছরে এ খাতে জনপ্রতি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯.৬১ ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৪৮৫ টাকা। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ১৪. ৪৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছে, যা মোট ঋণের ৯.৭ শতাংশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির শিকার শীর্ষ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অলাভজনক সংস্থা জার্মান ওয়াচের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার ১০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে সাত নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।
Discussion about this post